আজ বিশ্ব মশা দিবস
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:৫৫ এম, ২০ আগস্ট ২০২৫

আজ ২০ আগস্ট, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মশা দিবস’। প্রতিবছর এই দিনে মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির সূচনা ১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট, যেদিন ব্রিটিশ চিকিৎসক প্যাট্রিক ম্যানসন ও ভারতীয় মেডিক্যাল সার্ভিসের রোনাল্ড রস তাদের দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন, ম্যালেরিয়া পরজীবী বহন করতে পারে অ্যানোফিলিস মশা। এই গবেষণার জন্য রোনাল্ড রস পরে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের স্মরণে ‘মশা দিবস’ হিসেবে ২০ আগস্টকে বেছে নেওয়া হয়। ১৯৩০ সাল থেকে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উদ্যোগে দিনটি ‘বিশ্ব মশা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দিবসটি কেবল গবেষণার ইতিহাস উদযাপন নয়, বরং মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের বার্তাও বহন করে।
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হলো: ‘একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই ত্বরান্বিত করা।’ এই প্রতিপাদ্য বৈষম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়, বিশেষ করে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের মতো উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর দেশে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। দেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪ থেকে ১৬ প্রজাতির মশা দেখা যায়।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া এবং জাপানিজ এনকেফালাইটিস—এই পাঁচটি প্রধান মশাবাহিত রোগ বিদ্যমান।
দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৬৩ সালে, তখন একে ‘ঢাকা ফিভার’ বলা হতো। প্রথম বড় আকারের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব ঘটে ২০০০ সালে, যখন ৫,৫৫১ জন আক্রান্ত হয় এবং ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করে—সরকারি হিসাবে ১,০১,৩৫৪ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ১৭৯ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পৌঁছায় রেকর্ড ৩,২১,১৭৯ জনে এবং প্রাণ হারান ১,৭০৫ জন। ২০২৪ সালেও (এখন পর্যন্ত) ৯ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৭৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকা।
ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে, যার দুইটি প্রধান প্রজাতি হলো—এডিস ইজিপ্টাই (শহরের বা গৃহপালিত মশা) এবং অ্যালবোপিকটাস (গ্রাম বা পার্বত্য এলাকার এশিয়ান টাইগার মশা)। এডিস মশা সাধারণত পাত্রে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। বর্ষাকালে এই মশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণও বৃদ্ধি পায়।
২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় চিকুনগুনিয়া, যা ডেঙ্গুর মতোই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০১৬-১৭ সালে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। তবে ডেঙ্গু পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব থাকায় বর্তমানে চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই রোগটিও চিহ্নিতকরণে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অ্যানোফিলিস মশার সাতটি প্রজাতি এই রোগ ছড়ায়, যার মধ্যে চারটি প্রধান বাহক। পার্বত্য ও সীমান্তবর্তী ১৩ জেলার ৭২টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। ২০০৮ সালে সর্বোচ্চ ম্যালেরিয়া সংক্রমণ রেকর্ড হয়।
বিশ্ব মশা দিবসে এসব রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈশ্বিক উদ্যোগ জোরদারের আহ্বান জানানো হচ্ছে।