ছাত্রশক্তি গঠনের গল্প, জন্মের আগে শিবিরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নাহিদ মাহফুজরা


ছাত্রশক্তি গঠনের গল্প, জন্মের আগে শিবিরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নাহিদ মাহফুজরা

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির (বর্তমানে যার কার্যক্রম স্থগিত) সূচনা নিয়ে আলোচনায় ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও আপ বাংলাদেশের সংগঠক রাফে সালমান রিফাত। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি তুলে ধরেছেন ছাত্রশক্তি গঠনের পেছনের সময়কাল, শিবিরের সঙ্গে তাদের প্রাথমিক সংযোগ এবং নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন।

রিফাত জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ছাত্রশক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর কিছুদিন আগে তিনি ও সেক্রেটারি সাদিক কায়েম একটি বৈঠকে অংশ নেন। ঢাকার হাতিরপুল এলাকার এক রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশক্তির সম্ভাব্য নেতৃত্ব—আখতার হোসেন, নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ এবং আহনাফ সাঈদ। বৈঠক চলে প্রায় তিন ঘণ্টা।

রিফাতের ভাষ্যমতে, “ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারও তেমন কার্যক্রম নেই ক্যাম্পাসে, তাই নতুন একটা রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার চিন্তা থেকে তারা দেখা করতে চায়।” রিফাত বলেন, তৎকালীন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে থাকা অনেকেই পদত্যাগ করে নতুন উদ্যোগের দিকে ঝুঁকেছিলেন।

আলোচনায় অংশ নেওয়া পাঁচ নেতার মধ্যে মূল কথাবার্তা পরিচালনা করেন মাহফুজ, যিনি ছিলেন পুরো ধারণার ‘মূল মস্তিষ্ক’। আখতার ছিলেন দৃশ্যমান নেতৃত্বের মুখ, যাকে রিফাত বিবেচনা করেন একটি ‘ফ্রন্ট ফেইস’ হিসেবে। বাকিরা ছিলেন অপেক্ষাকৃত নীরব।

আলোচনার শেষে তারা রিফাত ও সাদিকের কাছে সহযোগিতা, দোয়া ও সমর্থন চান। রিফাত জানান, তিনি তাদের সাহস জুগিয়েছেন এবং ক্যাম্পাসে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

পরে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আখতার আহ্বায়ক ও নাহিদ সদস্য সচিব হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বায়ক করা হয় আসিফকে এবং সদস্য সচিব হন বাকের।

তবে আত্মপ্রকাশের কিছুদিন পরেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। মাহফুজ প্রকাশ্যে আখতার ও নাহিদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।

এরপরের সময়টায় ছাত্রশক্তি ক্যাম্পাসভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয় ফিলিস্তিন সংহতির পতাকা মিছিল, মানব পতাকা নির্মাণ, প্রোডাক্টিভ রমাদান কর্মসূচি, গণইফতার আয়োজন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের পুনরুত্থান।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে বিভিন্ন সংগঠন একত্র হয়, যেখানে ছাত্রশক্তির পাশাপাশি ছিল ছাত্র ফেডারেশন, ডিবেটার, সামাজিক সংগঠন এবং শিবিরের সদস্যরাও। তবে এই প্ল্যাটফর্মে ছিল না কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্ব বা সমন্বয়ক।

আখতার হোসেন, যিনি ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন এবং ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত, তাকেও সমন্বয়কের তালিকায় রাখা হয়নি। যদিও তাকে ১৭ জুলাই গ্রেফতার করা হয়।

রিফাত বলেন, ছাত্রশক্তি তার ৯ মাসের কার্যক্রমে শিবিরের সঙ্গে কখনও সরাসরি, কখনও প্রচ্ছন্নভাবে সমন্বয় করে চলেছে। সম্পর্কের ওঠানামা থাকলেও তা কখনও শত্রুতায় রূপ নেয়নি। তবে বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশ এখন শিবিরের সঙ্গে তাদের অতীত সংযোগ অস্বীকার করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তার ভাষায়, “ক্ষমতার অন্ধ মোহে নিজের এককালের সেইফগার্ডকেও নোংরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফ্যাসিবাদকে অট্টহাস্য দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।”

রিফাতের এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে, বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনের ভবিষ্যৎ গঠন ও আদর্শিক দায়বদ্ধতা নিয়ে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×