কোরিয়ায় ট্রাম্প-জিনপিং বৈঠক বৃহস্পতিবার, চুক্তির কাঠামো নিয়ে একমত দুইদেশ

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সম্ভাব্য এক বাণিজ্য চুক্তির কাঠামো নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের ভাষায়, এই সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং আলোচনা করবেন।

বেসেন্ট সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, আলোচনার এ কাঠামোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ ও চীনের বিরল খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি শিথিল করার বিষয়েও ‘চূড়ান্ত চুক্তি’র সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, “চীনা পণ্যের ওপর শতভাগ শুল্ক কার্যকর হবে; এটা আমি কল্পনাও করিনি, বিশেষত যখন চীন আবারও যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন আমদানি শুরু করতে যাচ্ছে।”

দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃহস্পতিবার নির্ধারিত বৈঠকে ট্রাম্প ও জিনপিং বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল।

বেসেন্ট জানান, দুই দেশ এখন এমন একটি কাঠামোয় পৌঁছেছে যা “উভয় পক্ষকেই শুল্ক আরোপ এড়াতে সাহায্য করবে।” চীনা সরকারের এক বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, আলোচক দলগুলো “উদ্বেগের মূল বিষয়গুলো নিয়ে মৌলিক সমঝোতায় পৌঁছেছে” এবং “বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।”

ট্রাম্পের শুল্কনীতি

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকটি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, যা তার মতে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াবে। এ নীতির ফলেই যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশ নতুন করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়েছে।

তবে চীনের ওপর সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি সতর্ক করেছেন, যদি বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করে, তবে নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যে শতভাগ শুল্ক বসবে। তার অভিযোগ, চীন “বিশ্বকে জিম্মি করার চেষ্টা” করছে।

বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ চীনেই প্রক্রিয়াজাত হয়, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সোলার প্যানেল তৈরিতেও অপরিহার্য। ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক বাড়ানোর পর বেইজিং এই খনিজ রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চীন দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের অন্যতম বড় ক্রেতা। কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধের সময় দেশটি সব অর্ডার বাতিল করায় মার্কিন কৃষকরা বিপাকে পড়ে। বেসেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেই অচলাবস্থা কাটছে। “আমি একজন সয়াবিন কৃষক, তাই এর কষ্ট আমি বুঝি...আমার মনে হয় আমরা কৃষকদের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে নজর দিয়েছি,” বলেন তিনি। তার বিশ্বাস, “চীনের সাথে চুক্তি ঘোষণার পর সয়াবিন চাষিরা স্বস্তি পাবেন।”

টিকটক নিয়ে অগ্রগতি

যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকের মালিকানা নিয়ে আলোচনায়ও অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান বেসেন্ট। জাতীয় নিরাপত্তার কারণে ওয়াশিংটন চাইছে, চীনা মালিকানাধীন বাইটড্যান্স থেকে টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম আলাদা করা হোক।

আগে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, টিকটককে তার মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি করতে হবে, নতুবা নিষিদ্ধ করা হবে। তবে আলোচনার সুযোগ রাখতে ট্রাম্প চার দফায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময় বাড়িয়েছেন এবং এখন ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভবিষ্যতে টিকটকের অ্যালগরিদম যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে এবং এর বোর্ডের সাত সদস্যের মধ্যে ছয়জনই হবেন মার্কিন নাগরিক। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও টিকটক নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, পরে সিদ্ধান্ত বদলান। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করেছিলেন তিনি।

এশিয়ায় নতুন বাণিজ্য চুক্তি

রবিবার যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গেও একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নির্ভরতার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মার্কিন শুল্কহার গড়ে ২০ শতাংশের বেশি।

এশিয়া সফরের শুরুতে মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি দেশের প্রতি আমাদের বার্তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের সঙ্গে শতভাগ আছে এবং আমরা কয়েক প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়তে চাই।”

তিনি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ নিয়ে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বাইরে নতুন উৎসে প্রবেশাধিকার দেবে।

এদিকে হোয়াইট হাউস ও ভিয়েতনাম “নজিরবিহীন” বাণিজ্য প্রবেশাধিকার চুক্তি ঘোষণা করেছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে আট বিলিয়ন ডলারের বোয়িং বিমান ও কৃষিপণ্য ক্রয়ে সম্মত হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা