গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যোগ দিচ্ছে মিশর ও রেডক্রস
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:৪৬ এম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় হামাসের হাতে নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারের অভিযানে এবার অংশ নিচ্ছে মিশর ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস (আইসিআরসি)। ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়ার পরই এই দুই পক্ষ মাঠে নামছে বলে জানা গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন অস্ত্রবিরতি চুক্তির আওতায় গাজায় নিহত সব ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। এই চুক্তিরই অংশ হিসেবে মিশর ও রেড ক্রস উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দেবে।
রোববার ইসরায়েলি সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মিশরীয় দল ও রেড ক্রসকে গাজার “ইয়েলো লাইন” অর্থাৎ ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত সীমারেখার বাইরে অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই দিন ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, রেড ক্রসের সঙ্গে যৌথভাবে মরদেহ উদ্ধারের কাজে হামাসকেও অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপে হামাস এখন পর্যন্ত ২৮ জন নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, বাকি মরদেহগুলোও ফেরত দিতে হবে তাদের। বর্তমানে বিষয়টি মিশরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, হামাস যেন দ্রুত সব মরদেহ ফিরিয়ে দেয়, না হলে “শান্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত অন্যান্য দেশ ব্যবস্থা নেবে।”
ইসরায়েলি এক মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, মিশরীয় উদ্ধারকর্মী ও রেড ক্রসের দল ইয়েলো লাইনের বাইরের অঞ্চলগুলোতে খননযন্ত্র ও ট্রাক ব্যবহার করে মরদেহ অনুসন্ধান করবে। গাজার উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব সীমানা ঘেঁষে এই ইয়েলো লাইনকে অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপের সীমারেখা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেড ক্রস পূর্বেও জিম্মি বিনিময় বা ফেরত প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে। হামাস সাধারণত সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে জিম্মিদের হস্তান্তর করে না; বরং রেড ক্রসের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। তবে এবারই প্রথমবারের মতো মিশরীয় উদ্ধার দলকে গাজার ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার ৮৪ শতাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাস জানিয়েছে, ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে মরদেহ উদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার ইসরায়েলের হাতে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করি। কোন আন্তর্জাতিক বাহিনী গ্রহণযোগ্য আর কোনটি নয়, তা ইসরায়েলই ঠিক করবে।”
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর অংশ হওয়ার আগ্রহ অনেক দেশই প্রকাশ করেছে, তবে ইসরায়েলের সম্মতি ছাড়া কাউকেই সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য তুরস্কের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তির ইঙ্গিত দেয়। তবে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।