ট্রাম্পের নির্দেশে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের একাংশ


ট্রাম্পের নির্দেশে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের একাংশ

হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে নির্মিত হতে যাওয়া বলরুমের জন্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঐতিহাসিক ইস্ট উইংয়ের একটি অংশ। এই উদ্যোগ ঘিরে ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে প্রশ্ন ও বিতর্ক।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক বাসভবন হোয়াইট হাউসে শুরু হয়েছে একটি বিশাল নির্মাণ প্রকল্প। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নতুন একটি বলরুম নির্মাণের প্রক্রিয়ায় পূর্ব উইং বা ইস্ট উইংয়ের কিছু অংশ ভাঙা হয়েছে। সোমবার, নির্মাণকর্মীরা উইংটির একটি ঢেকে রাখা প্রবেশপথ ও বিশাল জানালা সরিয়ে ফেলেছেন। এই এলাকাকে পুরোপুরি আধুনিকায়নের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। খবর বিবিসির।

ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, বলরুমটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। এটি হোয়াইট হাউসের মূল কাঠামোর একেবারে কাছাকাছি হবে, তবে সেটির গায়ে লাগবে না বা তার মূল রূপে কোনো পরিবর্তন আনবে না।

“বিদ্যমান ভবনে কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না। এটি হবে না। এটি এর কাছাকাছেই থাকবে ,কিন্তু স্পর্শ করবে না— এবং বিদ্যমান ভবনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানাই, যেটির আমি সবচেয়ে বড় ভক্ত,” গত জুলাইয়ে বলেছিলেন ট্রাম্প।

তিনি আরও বলেন, “এটি আমার প্রিয়। এটি আমার প্রিয় জায়গা, আমি এটি পছন্দ করি।”

সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, বলরুম নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিনের, এবং বর্তমানে যেখানে নির্মাণ চলছে, সেখানকার ভূমি ধসে পড়েছিল।

“১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, সব প্রেসিডেন্টই স্বপ্ন দেখেছেন হোয়াইট হাউসে একটি বলরুম থাকবে যেখানে জমকালো পার্টি, রাষ্ট্রীয় সফর ইত্যাদির জন্য লোকেদের ধারণ করার মতো ব্যবস্থা থাকবে,” তিনি লিখেছেন।

এই প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নের পরিবর্তে কিছু "উদার দেশপ্রেমিক" ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এখনো কোনো দাতার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ইস্ট উইং, যেটি ১৯০২ সালে নির্মিত এবং সর্বশেষ ১৯৪২ সালে সংস্কার করা হয়েছিল, বর্তমানে বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ পাশ থেকে নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও ক্রেন দেখা যাচ্ছে, যেগুলোর কিছুতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা টাঙানো।

ট্রাম্প লিখেছেন, ইস্ট উইং "সম্পূর্ণ আলাদা" একটি গঠন, যদিও এটি মূল হোয়াইট হাউসের সাথে সংযুক্ত।

প্রবেশপথটির বড় অংশ এখন আবৃত, তবে সেখানকার স্থাপনা ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দূর থেকেই কংক্রিট ধ্বংসাবশেষ ও ধাতব তার চোখে পড়ে।

যদিও হোয়াইট হাউস এবং এর আশপাশের এলাকা ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (NPS) পরিচালনা করে, প্রেসিডেন্টের হাতে এই ধরনের নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে।

NPS-এর সাবেক প্রধান ইতিহাসবিদ রবার্ট কে সাটন বিবিসিকে বলেন, “হোয়াইট হাউস যখন নির্মাণাধীন থাকে তখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও সবসময় উদ্বেগ থাকে।”

তিনি বলেন, “হোয়াইট হাউসের উভয়শাখাই সমান ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাদের উভয়েরই কার্যকারিতা রয়েছে।”

তবে সাটন ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বলরুমের ডিজাইন, আয়তন ও ব্যবহৃত উপকরণ নিয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য এখনও সামনে আসেনি।

“এই ভবনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী ভবন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবুও আমরা জানি না কী ঘটছে,” বলেন সাটন।

তিনি জানান, বলরুমটির ধারণক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য মিলছে, যা ৬০০ থেকে ৯০০ জন বা তারও বেশি হতে পারে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নিরাপত্তার দিকটি এই নির্মাণে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে কিনা, কারণ এটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও একটি উচ্চ সুরক্ষিত এলাকা।

হোয়াইট হাউস কিছু নকশা প্রকাশ করেছে, যাতে ভবনের আয়তন ও ভেতরের সাজসজ্জা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর মধ্যে শতাধিক সোনালী ঝাড়বাতি যুক্ত থাকার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর থেকে এবং ট্রাম্প এর আগে জাতীয় উদ্যান পরিষেবা ও মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্লার্ক কনস্ট্রাকশনকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ডিজাইন করেছে ম্যাকক্রি আর্কিটেক্টস। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

সাটন বলেন, সাধারণত হোয়াইট হাউসে যেকোনো পরিবর্তন আনতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, যাতে ভবনের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত থাকে। কারণ প্রেসিডেন্ট বদলালেও এই পরিবর্তনের প্রভাব থেকে যায় বহু প্রজন্ম ধরে।

তবে তিনি উদ্বিগ্ন যে, এইবারের প্রকল্পটি যেন তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং এতে দেশের ইতিহাসের চেয়ে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চিন্তাধারার প্রতিফলন বেশি।

“এটিকে সর্বদা পিপলস হাউস বলা হয়ে আসছে,” তিনি বলেন।

চলতি বছর ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আরও কিছু পরিবর্তন এনেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ওভাল অফিসে সোনালী সাজসজ্জা এবং রোজ গার্ডেনে কংক্রিটের পাটাতন তৈরি করে টেবিল ও চেয়ার বসানোর ব্যবস্থা।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×