জাতিসংঘের সঙ্গে ৫৭ বছরের পুরনো পরমাণু চুক্তি স্থগিত করল ইরান
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:৪৪ এম, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ইরান জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)–এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি।
আরাঘচি বলেন, “আমরা আইএইএ-এর সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছি। জাতিসংঘ যদি এমন কোনো প্রস্তাব দেয়, যা ইরানের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হয়— আমরা আবার চুক্তিতে ফিরে যাব।”
১৯৬৮ সালে ইরান আইএইএ’র সঙ্গে নন-প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট (এনপিটি)-তে সই করে। তখন দেশটির রাজা ছিলেন রেজা পাহলভী। ওই চুক্তিতে ইরান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখবে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেহরান ও আইএইএ’র সম্পর্ক ক্রমশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে, বিশেষত গত জুনের ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের পর থেকে। ৬ জুন প্রকাশিত আইএইএ’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের কাছে বর্তমানে ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যার বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশ। সংস্থাটি সতর্ক করে জানায়, বিশুদ্ধতার মাত্রা যদি ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, তবে তা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
এর এক সপ্তাহ পর, ১২ জুন রাতে, ইসরায়েল ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ নামের এক বিমান অভিযান চালায় ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, এ অভিযান চালানো হয়েছে জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।
১২ দিনব্যাপী সংঘর্ষে ইরানের সেনাপ্রধান, কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং অন্তত ১২ জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোরও, যদিও এখনো ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সংঘাতের পর আইএইএ তেহরান সফরের আগ্রহ প্রকাশ করলেও ইরান জানায়, তারা আলোচনায় আগ্রহী হলেও পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
পরে সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আব্বাস আরাঘচি। তবে জাতিসংঘের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় আলোচনাটি ব্যর্থ হয়। এর পরপরই জাতিসংঘ ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
রোববারের সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আরাঘচি বলেন, “আমরা তার প্রয়োজন দেখছি না। ইউরোপের সঙ্গে বৈঠকের আর কোনো ভিত্তি নেই।”
সূত্র: আরটি