গাজা পুনর্গঠনে কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ


গাজা পুনর্গঠনে কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর উত্তর গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষরা ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের ভাঙা ঘরে, যেখানে এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ আর ছাইভস্ম পড়ে আছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় অঞ্চলটি পরিণত হয়েছে এক বিরানভূমিতে।

এ অবস্থায় জাতিসংঘের আবাসন অধিকারবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার বালাকৃষ্ণ রাজাগোপাল বলেছেন, ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র (ক্যারাভান) পাঠানোর অনুমতি দিতে হবে। তিনি জানান, উত্তর গাজার যেসব এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে গেছে, সেখানে ফিরে ফিলিস্তিনিরা “ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না।”

শনিবার (১১ অক্টোবর) আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজাগোপাল বলেন, “(যুদ্ধের) মানসিক প্রভাব ও আঘাতের মাত্রা ভয়াবহ। উত্তর গাজায় ফিরে আসা লোকজনের মধ্যে আমরা এখন সেটাই স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি।” ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গত শুক্রবার থেকেই লাখো ফিলিস্তিনি ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছেন উত্তর গাজায়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই বিধ্বংসী যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। পুরো গাজা উপত্যকায় নেমে এসেছে এক নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে।

রাজাগোপাল আরও বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয় পাঠানোর পরিকল্পনা থাকলেও, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে কোনো সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাঁর মতে, “এটাই মূল সমস্যা। ইসরায়েল যদি গাজার সব প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণ না ছাড়ে, তাহলে সেখানে তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়।”

গাজাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে রাজাগোপাল “ডোমিসাইড” শব্দটি ব্যবহার করেন—যার অর্থ, গণহারে মানুষের বসতবাড়ি ধ্বংস করে তাদের বাস্তুচ্যুত করা। তাঁর ভাষায়, গাজায় বাড়িঘর ধ্বংসের এই প্রক্রিয়াই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের “জাতিহত্যার অন্যতম উপাদান।” তিনি বলেন, “মানুষকে উচ্ছেদ করে একটি অঞ্চলকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা জাতিহত্যার প্রধান উপাদানগুলোর একটি।”

জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেন, গাজার পুনর্গঠন শেষ হতে “কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে।” ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো জাতিগত নিধনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গত দুই বছরে যা ঘটেছে, সেটি যেন আরেকটি নাকবা—আরেকটি মহাবিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×