গাজা কারা শাসন করবে ঠিক করবে ফিলিস্তিনিরাই: হামাস সমর্থকদের কড়া বার্তা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:১৭ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫

যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গাজায় অস্ত্রের ঝড় কিছুটা থামলেও, এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। গাজায় কারা শাসন করবে, তা নিয়ে পশ্চিমা উদ্যোগের বিপরীতে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে হামাস ও এর মিত্র সংগঠনগুলো; এই সিদ্ধান্ত হবে কেবল ফিলিস্তিনিদেরই।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে হামাসের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি)। তারা বলেছে, “গাজার প্রশাসনিক কাঠামো কেমন হবে, সেটা নির্ধারণের অধিকার ফিলিস্তিনিদেরই। তারা নিজেদের সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেবে।”
সংগঠন দুটি আরও দাবি করে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাতের পরিকল্পনা ইসরায়েলের জন্য ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। তারা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, “বিদেশি শাসনের” যেকোনো রূপের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা এককাট্টা থাকবে।
যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে কীভাবে এগোনো হবে, সে বিষয়ে একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’ আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তাদের ভাষায়, এই বৈঠক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবে এবং স্বচ্ছতা, অংশীদারিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে সহায়ক হবে। তবে বৈঠকে ফাতাহ অংশ নেবে কিনা, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার আওতায়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজার তত্ত্বাবধানে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প নিজে। এতে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বেশ কিছু পরিচিত মুখ যুক্ত থাকবেন। ‘বোর্ড অব পিস’ অন্তর্বর্তীকালীন টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে।
যদিও যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় ট্রাম্পের পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়িত হয়েছে, তবুও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন কার হাতে যাবে; সেই প্রশ্ন এখনো উন্মুক্তই রয়ে গেছে। আল-জাজিরার হাতে আসা চুক্তির একটি কপিতে দেখা গেছে, প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে প্রকাশ্যে উদ্যাপন না করতে এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।
চুক্তিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, পুনরায় চালু করতে হবে সুপেয় পানির সরবরাহ, এবং গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করতে হবে আশ্রয়কেন্দ্র।
গাজা সিভিল ডিফেন্স জানায়, যুদ্ধবিরতির পর শহরের রাস্তাগুলো থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আহত ও নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজার উত্তর উপকূলীয় অঞ্চল থেকে পিছু হটে, বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তুপের ভেতর দিয়েই ভেঙে পড়া ঘরের দিকে ফেরার চেষ্টা শুরু করে।
গাজা থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানান, “আমরা যখন উপকূলীয় সড়কের প্রবেশমুখে পৌঁছালাম, তখন জায়গাটা চিনতে পারছিলাম না; পুরোটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।” তার ভাষায়, কয়েক সপ্তাহের টানা বোমাবর্ষণে শহরের প্রায় সবকিছুই গুঁড়িয়ে গেছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সঙ্গেই পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরাতে সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বান করা হয়েছে। তবে বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফকে পাশ কাটিয়ে এবার জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও চুক্তিতে ভূমিকা না থাকলেও জিএইচএফ বলেছে, তারা গাজায় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।