ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বন্দির সময়কার অভিজ্ঞতা জানালেন শহিদুল আলম
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:৪৩ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫

সমাজসেবী সংগঠন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে আটক থাকার সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন।
শহিদুল আলম বলেন, জাহাজ থেকে তাদের আটক করার পর ইসরায়েলি কারাগারে চলমান ছিল কঠোর মানসিক নিপীড়ন। বন্দিদের ওপর ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই রাতে মেশিনগান হাতে সেলে ঢুকে চিৎকার করে দাঁড় করানো হতো এবং বিভিন্ন নির্দেশ জোর করে মানানো হত। একটি সহযাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে হামাসের সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়ে হত্যার হুমকিও তাদের দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরো জানান, আটককালে তাদের হাত পেছনে বেঁধে এমন একটি স্থানে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল যেখানে আগে থেকেই ইসরায়েলি সৈন্যরা মূত্রত্যাগ করেছিল। পরে যখন তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইসরায়েলি সৈন্যরা ফেলে দেয় এবং তা তুলতে গেলে তাঁকে ধাক্কা ও আঘাত করা হয়। কথাবার্তায় অভিযুক্ত সহযাত্রীদের ওপর মেশিনগানের ব্যারেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে—এমনও ঘটেছে।
দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, তাদের রাখা হয়েছিল নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত একটি অত্যন্ত গোপনীয় কারাগারে, যেখানে অধিকাংশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে রাখা হয়। সেখানে এক সহযাত্রী শহিদুলকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বলে বলে বলে— "তুমি হামাসের এজেন্ট, ভেতরে নিয়ে তোমাকে গুলি করা হবে।"
শহিদুল বলেন, আটককালে তারা অনশন পালন করেন; অনশন চলাকালীন কেউ কেউ শারীরিক দুর্বলতার কারণে পরে অল্প পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করেন। আড়াই দিনের মধ্যে তাদেরকে মাত্র এক প্লেট খাবার দেয়া হয়েছিল। তারা শোবার জন্য ঠান্ডা লোহার বিছানায় রাখা হয় এবং টয়লেটের অবস্থা ছিল অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর।
তিনি আরও বলেন, গভীর রাতে ইসরায়েলি জওয়ানরা সেলে ঢুকে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করত—এতে বন্দিরা মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকতেন এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শহিদুল আলম জানান, কয়েকজন সক্রিয় ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি জাল (নেটওয়ার্ক) গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গ্লোবাল লিডাররা যদি এগিয়ে না আসেন, তবে সক্রিয় কর্মীদের উদ্যোগেই লড়াই চালানো হবে; তাদের একটি ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত আছে এবং দেশে ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—পুনরায় ফিরে গিয়ে হাজারো জাহাজ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
শহিদুল উল্লেখ করেন, দেশে জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় রাস্তায় নেমে এক স্বৈরাচারককে সরিয়ে দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও একই রকম উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি শনিবার ভোরে ইসরায়েলের আটক দশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকদের সামনে উন্মুক্তভাবে তুলে ধরেন।