মাচাদোকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: ট্রাম্প


মাচাদোকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: ট্রাম্প

নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার জয়ের পর প্রথমে নীরব থাকলেও, পরে এক মন্তব্যে ট্রাম্প দাবি করেন, মাচাডো চাইলে নোবেলটি তাকেই দিতে পারতেন।

“ও ফোন করে বলেছে, ‘আমি এই পুরস্কারটি আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ আসলে আপনিই এটি পাওয়ার যোগ্য।’ এটা খুব সুন্দর একটা কথা। আমি বলিনি, তাহলে আমাকেই দাও; যদিও দিলে খারাপ হতো না!” শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনটাই জানান প্রেসিডেন্ট।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “একনায়কতন্ত্র থেকে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য অবদান রাখার” স্বীকৃতিতেই মাচাদোকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে তার বহু বছরের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানায় কমিটি।

পুরস্কার ঘোষণার পরপরই স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাচাদো জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। যদিও সে কথার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি, শুধু বলেন, “ট্রাম্পের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

মাচাডোর এই ফোনালাপকে ঘিরেই শুরু হয় আলোচনার ঝড়। ট্রাম্প বলেন, “আমি ওকে অনেকভাবে সহায়তা করেছি। ভেনেজুয়েলায় এখন ভয়াবহ অবস্থা, সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জন্য দেওয়া হয়েছে, যখন আমি নির্বাচনী প্রচারে ছিলাম।”

এদিকে, নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্য ক্ষোভ জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। প্রশাসনের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুং সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “নোবেল কমিটি শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটাই প্রমাণ হলো।”

মাচাডো দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই কারণে তাকে একসময় আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল, যদিও রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যান তিনি। মাদুরো সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে মার্কিন রিপাবলিকান প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পূর্বে।

২০২৪ সালে মাচাডোর নোবেল মনোনয়ন প্রস্তাব দেন মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ। তাদের যৌথ চিঠিতে লেখা হয়, “গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য মাচাডোর সাহসিকতা ও নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব তাকে এই পুরস্কারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।”

তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ভেনেজুয়েলা বিষয়ক বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল আরও একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, “নোবেল পুরস্কার বহু আগেই তার মর্যাদা হারিয়েছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, নোবেল কমিটি আসলে দুই পক্ষ; যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার সরকারবিরোধীদের উদ্দেশে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে: পরিবর্তনের পথ যেন শান্তিপূর্ণ হয়, সামরিক নয়।

এদিকে বিতর্কের মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেন, “নোবেল কমিটি মাঝে মাঝে এমন লোককেও পুরস্কার দেয়, যিনি শান্তির জন্য কিছুই করেননি। কিন্তু বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।”

পুতিনের বক্তব্যের জবাবে ট্রাম্প নিজের প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ সংক্ষেপে লেখেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!”

নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণের পর মাচাডো বলেন, “এই পুরস্কারটি আমি উৎসর্গ করছি ভেনেজুয়েলার নিপীড়িত জনগণের উদ্দেশে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি, যিনি আমাদের লক্ষ্য পূরণে অটল সমর্থন দিয়েছেন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাচাডোর নোবেল জয় ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে এক বড় উৎসাহ বয়ে আনবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘিরে বিতর্কিত প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×