সুদের টাকা না পেয়ে কৃষকের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, ইমামসহ গ্রেপ্তার ৪


সুদের টাকা না পেয়ে কৃষকের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, ইমামসহ গ্রেপ্তার ৪

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সুদের টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় এক কৃষকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে ইমামের স্ত্রীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জামিরাকান্দা গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামিরাকান্দার কৃষক সোহেল মিয়ার স্ত্রী রিতা বেগম পার্শ্ববর্তী গ্রামের আমানুল্লাহ মুন্সির কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন প্রতি মাসে ১০ শতাংশ সুদে। আমানুল্লাহ মুন্সি পাঁচগাঁও বাজারের একটি জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম। শুরুতে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলেও কিছুদিন আগে রিতা আসল টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এরপরও ইমাম আমানুল্লাহ বাকি হিসেবে আরও ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন।

ঋণের টাকা জোগাড় করতে রিতা ঢাকায় স্বামী ও সন্তানের কাছে চলে যান। এর সুযোগে গত ৮ ও ৯ অক্টোবর ইমাম আমানুল্লাহ স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রিতার দুটি ঘরে হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা ঘরের টিন, কাঠ, আসবাব, খুঁটি, নলকূপ, এমনকি গাছপালা ও মেঝের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়। তখন ঘরে কেউ না থাকায় পুরো বাড়িটি তছনছ করে ফেলে অভিযুক্তরা। পরে রিতা বেগম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান।

পরদিন শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রিতার পরিবারের পক্ষ থেকে নয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করা হয়।

পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে— তারা হলেন ইমাম আমানুল্লাহর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৪২), সোহেল রানার স্ত্রী খাদিজা বেগম (২৬), বাবু মিয়া (২১) ও নয়ন মিয়া (১৯)।

ভুক্তভোগী রিতার বোন রিমা অভিযোগ করে বলেন, “আমার বোন আগেও এক লাখ টাকা সুদে নিয়েছিল, সেই টাকা পরিশোধও করেছে। পরে আরেক লাখ টাকা নেয়, যার সুদ আট মাস দিয়েছে। মাত্র দুই মাস দিতে না পারায় ঢাকায় গিয়ে টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল। এই সুযোগে তারা ঘরবাড়ি ভেঙে সব নিয়ে গেছে। আমার বোন নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরা ন্যায্য বিচার চাই।”

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কানাই লাল চক্রবর্তী বলেন, “সুদের টাকা না পেয়ে বাড়িঘর থেকে টিন, ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে অভিযুক্তরা। আমরা বেশিরভাগ জিনিস উদ্ধার করেছি। চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।”

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুহেল রানা জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলছে এবং দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। “গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে,” বলেন তিনি।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×