ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় একাধিক ঘাটতি রয়েছে: মিসর


ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় একাধিক ঘাটতি রয়েছে: মিসর

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নযোগ্য, তবে হামাস এতে রাজি না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিতে পারে।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফরাসি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনে আয়োজিত এক আলোচনায় অংশ নিয়ে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কাতারের ভাইদের সঙ্গে এবং তুরস্কের সহকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করছি, যেন হামাসকে এই পরিকল্পনায় ইতিবাচক সাড়া দিতে রাজি করানো যায়।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বহু ফাঁক রয়েছে, যা পূরণ করা দরকার।” তার মতে, গাজার প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা কাঠামো, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সময়ের ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনা প্রয়োজন।

আবদেলাত্তি জানিয়েছেন, মিসর অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে এবং হামাসের প্রতিক্রিয়া বুঝে নিতে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। “রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তবে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন,” তিনি বলেন।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে জানান, যদি হামাস প্রস্তাবিত পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিতে পারে এবং উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠবে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “যে কোনো পরিস্থিতিতেই মিসর গাজার জনগণের বাস্তুচ্যুতি মেনে নেবে না।”

এদিকে, মিসরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা মাদবৌলি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির খসড়ায় কিছু মৌলিক নীতি রয়েছে, যা মিসরের দীর্ঘদিনের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, “এই নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি না হওয়া, গাজা ও পশ্চিম তীর দখল না করা, যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা, বন্দিমুক্তি এবং গাজার পুনর্গঠন।”

গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস গাজা নিয়ে একটি নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করে, যাতে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্গঠনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা অঞ্চলকে ‘অস্ত্রশূন্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে এবং সেখানে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠিত হবে, যা পরিচালিত হবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তদারকি করবেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এর অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে তাদের হাতে থাকা সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে।

এছাড়া, শত্রুতা বন্ধ, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ এবং ধাপে ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে প্রত্যাহারের বিষয়টিও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্তর্বর্তী প্রশাসন হবে প্রযুক্তিনির্ভর, যা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে পরিচালিত হবে এবং তার নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তবে পরিকল্পনায় ইসরায়েলের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি, অথচ হামাসের জন্য নির্দিষ্ট ও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি, সেনা প্রত্যাহার বা মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমাও নির্ধারিত নয়।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৬ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজা এখন কার্যত বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এবং সেখানে অনাহার ও রোগব্যাধি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×