ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইরান: হুঁশিয়ারি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:১৪ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা যেন ফের বিস্ফোরণের অপেক্ষায়। যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, যিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন—ইসরায়েল আক্রমণ করলে ইরান প্রস্তুত জবাব দিতে।
ইসরায়েল যদি আবার আগ্রাসন চালায়, তাহলে ইরান সম্পূর্ণভাবে পাল্টা হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। তার মতে, দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান যুদ্ধবিরতি বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান এসব মন্তব্য করেন, যা সম্প্রচারিত হয় বুধবার, ২৩ জুলাই। এটি ছিল তার প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকার, গত মাসে ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনব্যাপী ভয়াবহ সংঘাতের পর।
ওই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালায়। যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই হামলায় ইরানের স্থাপনাগুলোর ক্ষতি প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি।
সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান বলেন, “ইসরায়েল যদি আবারও হামলা চালায়, তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি এবং প্রয়োজনে ইসরায়েলের ভেতরে গিয়েও হামলা করতে পারব।” তিনি আরও বলেন, “এই যুদ্ধবিরতিকে আমরা টেকসই বলে মনে করি না। তাই যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমাদের সেনাবাহিনী প্রস্তুত। ইসরায়েল আমাদের ক্ষতি করেছে, আমরাও তাদের গভীরে গিয়ে আঘাত করেছি। তবে তারা তাদের ক্ষতির পরিমাণ গোপন করছে।”
তিনি জানান, ইসরায়েলের আক্রমণে ইরানের উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের প্রাণহানি হয়েছে, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ভাষায়, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করা, তবে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
গত জুনে সংঘর্ষের সময় ইরানে প্রাণ হারান ৯০০-র বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক। অপরদিকে, ইসরায়েলের হতাহতের সংখ্যা ছিল অন্তত ২৮। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ২৪ জুন।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের পরিসীমার মধ্যেই। তিনি বলেন, “(মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড) ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়— আমরা সেটি মেনে নিচ্ছি, কারণ আমরাও পারমাণবিক অস্ত্রের বিরোধিতা করি। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, মানবিক এবং কৌশলগত অবস্থান।”
কূটনৈতিক সমাধানকেই প্রাধান্য দিতে চান বলে জানান তিনি। “আমরা কূটনীতিতে বিশ্বাসী, তাই ভবিষ্যৎ আলোচনায় দুই পক্ষের জন্য লাভজনক সমাধান হতে হবে। হুমকি বা একতরফা শর্ত আমরা মানি না।”
ট্রাম্প যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন, সেটিকে “অলীক ধারণা” বলে নাকচ করে দেন পেজেশকিয়ান। তিনি বলেন, “আমাদের ক্ষমতা আমাদের বিজ্ঞানীদের মাথায়— স্থাপনাগুলোতে নয়।”
আরও একটি বিস্ফোরক তথ্য দেন ইরানি প্রেসিডেন্ট— গত ১৫ জুন তেহরানে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তার ওপর হত্যাচেষ্টা চালিয়েছিল ইসরায়েল। ওই হামলায় তিনি সামান্য আহত হন। পেজেশকিয়ানের মতে, ইরানকে অস্থিতিশীল করতে ইসরায়েল শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল, তবে সেটি ব্যর্থ হয়েছে।
সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তখন ইরান পাল্টা আঘাত হানে কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে। এ প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা কাতার বা কাতারের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতা পোষণ করি না। ওই হামলা ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটির বিরুদ্ধে।”
তিনি জানান, হামলার দিন তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ফোন করে বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
পেজেশকিয়ান বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে এবং সততার সাথে বলছি যে আমরা কাতার রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ করিনি, বরং আমরা আমেরিকার একটি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছি যারা আমাদের দেশে বোমা হামলা চালিয়েছে। যদিও কাতার এবং কাতারের জনগণের প্রতি আমাদের সকল উদ্দেশ্যই ভালো এবং ইতিবাচক।”