ডেঙ্গু বাড়ছেই, চিকিৎসায় ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:০৬ এম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নেওয়ায়, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয় সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৬৬৫ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, “ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে - ডেঙ্গু শনাক্তে জরুরি ভিত্তিতে এনএস১ টেস্ট চালু রাখা, প্রয়োজনীয় কিট ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই নতুন সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য ২৪ ঘণ্টা পরীক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রাখতে হবে।
সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বহির্বিভাগে যারা ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের চিকিৎসাও ডেঙ্গু ওয়ার্ডে নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা মেডিকেল বোর্ড গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে ডেঙ্গু রোগীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রতিটি রোগীর তথ্য সংরক্ষণ ও তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর দায়িত্ব একজন নির্দিষ্ট নার্সকে দিতে হবে। কোনো রোগী ডেঙ্গুতে মারা গেলে, সংক্ষিপ্ত তথ্য ৬ ঘণ্টার মধ্যে এবং বিস্তারিত প্রতিবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং মশা নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হাসপাতালগুলোকে বলা হয়েছে। প্রতি শনিবার সকালবেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সমন্বয় সভার আয়োজন করতে হবে, যার সভাপতিত্ব করবেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক অথবা সিভিল সার্জন। প্রয়োজন হলে অন্যান্য জেলার হাসপাতালগুলোও এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭৯ জন, ঢাকা বিভাগে ১২৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৮৩ জন এবং দক্ষিণ সিটিতে ১৪১ জন রোগী ভর্তি হন। খুলনায় ৬৭ জন, ময়মনসিংহে ১৯ জন, রংপুরে ১৪ জন এবং সিলেটে ২ জন রোগী নতুন করে ভর্তি হয়েছেন।
একই সময়ে ৬৫২ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৩৯ হাজার ১৯২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ১৮০ জন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করছে, এ ১২ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হবে এবং স্বাস্থ্যসেবা আরও গঠনমূলক হবে।