বাংলাদেশে তৈরি করোনার টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ পেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি


বাংলাদেশে তৈরি করোনার টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ পেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট পেয়েছে। এটি দেশের ওষুধ ও জৈবপ্রযুক্তি খাতে প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের পেটেন্ট অর্জিত টিকা।

রবিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সাল থেকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা ও জটিল রোগের ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে আসছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে কাকন নাগ ও নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে এমআরএনএ ভিত্তিক এই টিকা তৈরির কাজ শুরু করেন।

২০২০ সালে ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর জেনেটিক কোড যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জৈবতথ্য ভাণ্ডার (এসসিবিএ) তে প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘এলসেভিয়ারের ‘ভ্যাকসিন’ জার্নালে টিকাটির ওপর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। একই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-কে তাদের কোভিড টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

গ্লোব বায়োটেকের দাবি, ‘বঙ্গভ্যাক্স’ একমাত্র এমআরএনএ-ভিত্তিক কোভিড টিকা যা মাত্র এক ডোজেই কার্যকর এবং বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম।

টিকাটিতে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ডিএনএ, সাব-ইউনিট, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস বা পুনঃসংশ্লেষিত ভাইরাসভিত্তিক টিকা তৈরিতেও কাজে লাগবে।

এই প্রযুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ৩০টি উদ্ভাবনী দাবি (ইনভেনশন ক্লেইম) অনুমোদিত হয়েছে, যা এটি সম্পূর্ণ নতুন ও মৌলিক আবিষ্কার প্রমাণ করে।

‘বঙ্গভ্যাক্স’ ইতোমধ্যে প্রাণীর দেহে (বানর) সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) থেকে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার অনুমতিও পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৬ সালে যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ করবে, তখন নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই ধরনের টিকা দেশের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এতে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে।

গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষক কাকন নাগ বলেন, “এটি শুধু একটি টিকার মেধাস্বত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন অপেক্ষা, টিকাটি চূড়ান্ত পরীক্ষার পর সাধারণ মানুষের ব্যবহারে কবে আসবে।”

তিনি আরও জানান, “এই প্রযুক্তি শুধু করোনা নয়, ভবিষ্যতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তের অসুখসহ জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরির পথও উন্মুক্ত করবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×