ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোসহ নয় দাবি চবির শিক্ষার্থীদের
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:৪৭ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো, পোষ্য কোটা বাতিল, চাকসু নির্বাচন ও নির্মিত হলগুলোতে আসন বরাদ্দসহ নয় দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের আবির বিন জাবেদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আরিফ মঈনুদ্দিন, মার্কেটিং বিভাগের আজাদ হোসেন, সঙ্গীত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জশদ জাকির, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ওয়ালিদুর রহমান রাফিজ, ইংরেজি বিভাগের জালাল উদ্দীন মিজবাহ, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ফারুক হোসেন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের নয় দাবির বাস্তবায়নের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হচ্ছে, এখানে প্রশাসন যদি ফি না কমিয়ে এক হাজার টাকাই রাখে তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করবো। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে আবেদন করে। এখানে এক হাজার টাকা আবেদন ফি কোনোভাবেই যৌক্তিক না।’
মানববন্ধনে আবির বিন জাবেদ বলেন, ‘আমাদের দাবি বিবেচনা করে প্রশাসন ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে আবারও বিজ্ঞপ্তি দিবেন। যদি তা না হয় তাহলে আমরা টানা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী সাঈদ মুহাম্মদ রেদওয়ান বলেন, ‘ভর্তি ফি কমানোর পাশাপাশি আমরা ক্যাম্পাসে যেসব গুপ্ত হামলা ঘটছে, সেগুলার বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গভীর রাতে কে কী করে সেগুলোর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকলেও এতগুলো গুপ্ত হামলার দিকে কোন নজর নেই।’
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ফি কোথায় কোন খাতে খরচ হয় তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় চলে দেশের শ্রমিক, দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। ভর্তি পরীক্ষার ফি থেকে যদি প্রশাসন বাড়তি আয় করতে চায় তাহলে স্বৈরাচারী হাসিনার প্রশাসনের সাথে এই প্রশাসনের কোনো ফারাক নেই।’
শিক্ষার্থীদের নয় দাবি হল ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ২০০ টাকা; মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা, পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু; বন্ধ হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা, বাড়ির দূরত্ব এবং মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ ও অতিদ্রুত নতুন দুইটি হল নির্মাণ; ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল এক্সট্রা কারিকুলার সংগঠনগুলোকে অফিস বরাদ্দ; অনতিবিলম্বে টিএসসি নির্মাণ; অতি দ্রুত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন; প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদান ও অনলাইনে রেজাল্ট প্রকাশসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড অনলাইনভিত্তিক এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গুপ্ত হামলার সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েল উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ফি কমানোর বিষয়ে আলাপ হয়েছিল। আগের বছরের খরচ বিবেচনা করে এ বছর ফি কমানো সম্ভব হয়নি। এই টাকার হিসাব জাতির সামনে পেশ করা হবে। এই ফি থেকে ৪০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে দিতে হয়। ঢাকা ও রাজশাহীতে পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় সেখানেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতি তো আছেই। সবমিলিয়ে ফি কমানো সম্ভব হয়নি।’
পোষ্য কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটা আমরা নির্দিষ্ট আসন থেকে দিচ্ছি না। কোন বিভাগে ১০০ আসন থাকলে এই আসনগুলোতে পোষ্য কোটা প্রযোজ্য হবে না। বরং, এর বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত হিসেবে ওই বিভাগে দুই বা তিনটি আসন রেখে পোষ্যদের ভর্তি নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ওই বিভাগে ১০২ বা ১০৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন।’