রপ্তানিতে ঊর্ধ্বমুখী ধারা: জুলাই-মার্চে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০.৮৪%
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:০৩ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৫
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত রপ্তানিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখিয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে দেশের গার্মেন্টস রপ্তানি হয়েছে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
ইপিবির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই প্রবৃদ্ধি তৈরি পোশাক খাতের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রপ্তানির প্রায় অর্ধেক—৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশ—ইইউতে গেছে, যার বাজার মূল্য ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কানাডায় রপ্তানি হয়েছে ৯৬৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক, দেশটি বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ গ্রহণ করেছে। এদিকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক, যা ১১ দশমিক ১০ শতাংশ বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নে গার্মেন্টস রপ্তানি বছরে ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধির হার ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং কানাডায় ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম—মাত্র ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে ৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। পরবর্তী স্থানে রয়েছে স্পেন (২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন), ফ্রান্স (১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন), নেদারল্যান্ডস (১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন), পোল্যান্ড (১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন) এবং ইতালি (১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন)।
এই বাজারগুলোর প্রবৃদ্ধির হার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল - জার্মানি (১০ দশমিক ৭২ শতাংশ), ফ্রান্স (১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ), পোল্যান্ড (১০ দশমিক ৩২ শতাংশ), ডেনমার্ক (১২ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং সুইডেন (১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে মোট ৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।
এই তালিকায় জাপান শীর্ষে রয়েছে ৯৬০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার রপ্তানিসহ। এরপর রয়েছে অস্ট্রেলিয়া (৬৫৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন) ও ভারত (৫৩৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন)।
তুরস্ক ও মেক্সিকোর বাজারও নজরকাড়া; তুরস্কে রপ্তানি হয়েছে ৩৫৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার এবং মেক্সিকোতে ২৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার।
যদিও বেশিরভাগ বাজারে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল, কিছু বাজারে কমতি লক্ষ্য করা গেছে। রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বাজারগুলোতে আরও কৌশলগত মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
নিটওয়্যার খাতে রপ্তানি ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে, ওভেন পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধির গতি তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও, অপ্রচলিত বাজারে এই দুই খাতেই শক্তিশালী অগ্রগতি দেখা গেছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এটি আমাদের মোট রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ঐতিহ্যবাহী বাজারের তাৎপর্য প্রদর্শন করে।
তিনি আরও বলেন, অপ্রচলিত বাজারে মাঝারি প্রবৃদ্ধি এই বিভাগে আরও গবেষণা এবং মনোযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে, কারণ এর যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী বাজারের ওপর নির্ভরতা ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।
রুবেল মন্তব্য করেন, স্থায়ী বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমাগত বৈশ্বিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করছে। এমন সুযোগ তৈরি করছে যা বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারে।
বর্তমান প্রবৃদ্ধি চিত্র দেখায়, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি এখনো ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। তবে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে সম্ভাবনার বিকাশ এই নির্ভরতাকে ভবিষ্যতে আরও ভারসাম্যমূলক করে তুলতে পারে।
সূত্র: বাসস