সরকারের উদ্যোগে দেশীয় কীটনাশক উৎপাদনে নতুন দিগন্ত, রপ্তানির পথ উন্মুক্ত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:৪২ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
সরকার দেশে কীটনাশক উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করেছে, যা দেশের কৃষি খাতে আমদানি নির্ভরতা কমাবে এবং স্থানীয় উৎপাদন ও রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। এই সিদ্ধান্ত সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২১ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে ‘স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ)-এর সভাপতি এবং ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভার সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব।
সভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রথমত, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বালাইনাশক শিল্পের জন্য নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, যা কাঁচামাল আমদানি, অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হবে। দ্বিতীয়ত, কীটনাশক উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের তালিকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হবে, যাতে শুল্ক রেয়াত এবং আমদানি সহজীকরণ সম্ভব হয়।
খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ কৃষি ও এগ্রোকেমিক্যাল শিল্পের জন্য মাইলফলক। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শুল্কের কারণে দেশীয় কীটনাশক উৎপাদন ব্যাহত ছিল। কাঁচামাল আমদানি সহজ হলে স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে। এর ফলে কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের কীটনাশক পাবেন, পাশাপাশি দেশীয় শিল্পে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
বর্তমানে দেশের কীটনাশক বাজারের আকার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি দখল করছে ৫৫ শতাংশ, আমদানিকারকরা ৪১ শতাংশ, আর দেশীয় উৎপাদনের অংশ মাত্র ৪ শতাংশ। কারণ কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামালে শুল্ক ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ, যেখানে প্রস্তুত পণ্য আমদানিতে শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে আমদানি উৎপাদনের তুলনায় বেশি লাভজনক ছিল।
বিএএমএর সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সরকার উৎপাদনকারীদের দাবি বাস্তবায়ন করেছে। এখন দায়িত্ব এনবিআরের। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিলে আগামী ২–৩ বছরের মধ্যে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের এই সহযোগিতা মানে কৃষকের সঙ্গে কাজ করা, কৃষকের পক্ষে দাঁড়ানো। শুল্ক রেয়াত পেলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা পণ্যের দাম অন্তত ৩০ শতাংশ কমাতে পারবে, যা ভেজাল ও নিম্নমানের আমদানিকৃত কীটনাশক থেকে কৃষকদের রক্ষা করবে।”
বর্তমানে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি), অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসআই), স্কয়ারসহ প্রায় ২০টি স্থানীয় কোম্পানি কীটনাশক উৎপাদনে যুক্ত।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বাজেটে কৃষি খাতে ব্যবহৃত কীটনাশকের কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে উচ্চ শুল্কের কারণে এতদিন দেশে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত ছিল।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র শিল্প নয়, পুরো কৃষি খাতকে বদলে দিতে পারে। আশা করা হচ্ছে, সরকারের নীতিগত সহায়তা দেশীয় উৎপাদনে গতি আনবে, কৃষকের ব্যয় কমাবে এবং ভবিষ্যতে কীটনাশক রপ্তানিতে ‘বাংলাদেশ’ নাম গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।