মুদ্রানীতি, সুদহার-ঋণ প্রবাহে নির্বাচনের আগে নেই নতুন বার্তা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৯:০৫ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তাতে বড় কোনো চমক থাকছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মূল্যস্ফীতির চাপ ও বিনিয়োগ স্থবিরতার বাস্তবতায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার ‘নিয়মরক্ষার’ পথেই হাঁটছে।
আগামী ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)’ প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করবেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর দুই দফায় মুদ্রানীতি প্রকাশ করে— জানুয়ারি-জুন এবং জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে। এতে মুদ্রাসরবরাহ, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের রূপরেখা, এবং ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে নির্বাচনের আগে ঘোষিত এবারের মুদ্রানীতিতে মূলত স্থিতাবস্থাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ আগ্রহ কমে গেছে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায়, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে নীতিগত কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলেও, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল ফোকাস রেখেছে মূল্যস্ফীতিকে লাগাম টেনে ধরার ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশ, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ এই সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯.৮ শতাংশ। ফলে ঋণপ্রবাহের বিদ্যমান ধারা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মূল্যস্ফীতির চিত্রেও উদ্বেগ রয়ে গেছে। চলতি বছরের জুনে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ, যা মে মাসে ছিল ৯.০৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত নীতি সুদহার কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
অর্থনীতির সামগ্রিক গতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪.৯ শতাংশ এবং ২০২৬–২৭ অর্থবছরে ৫.৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
এদিকে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেবে।
চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ হাজার কোটি এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক এই মুহূর্তে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের পথে না গিয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।