বন্ধের পথে বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বন্ধ কয়লা আমদানি!
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:১৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৫
বিল না পাওয়ায় কয়লা আমদানিতে অক্ষম হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অবস্থিত ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যমান কয়লা মজুদ ৫ আগস্টের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-এর কাছে জরুরি ভিত্তিতে কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং বিপিডিবি চেয়ারম্যান বরাবর একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানান, জুন ২০২৫ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ ৩,১৬৬ কোটি টাকার বেশি বিল এখনো বকেয়া রয়েছে। তিনি সতর্ক করে দেন, দ্রুত ৮০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা না হলে কয়লা আমদানি করা সম্ভব হবে না, ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হবে।
২৭ জুলাই পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে কয়লার যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে তা দিয়ে মাত্র ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বিদেশ থেকে কয়লার মাদার ভেসেল নিশ্চিত করতে হলে অন্তত এক মাস আগে এলসি খোলা প্রয়োজন। কিন্তু দেশীয় ব্যাংকগুলোতে ১০০% এলসি মার্জিন জমা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি কয়লা বুকিং দিতে পারছে না। এ নিয়ে একাধিকবার তাগাদা দিলেও বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যদি পাওনা ১০ লাখ মার্কিন ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা অতিক্রম করে, তবে বিপিডিবি প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না নেওয়ার অধিকার রাখে, এবং কেন্দ্রটির পক্ষেও বিদ্যুৎ সরবরাহ না করার স্বাধীনতা থাকবে। যদিও কেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও 'ক্যাপাসিটি চার্জ' পাওয়ার অধিকার তাদের থাকবে।
ট্যান ঝেলিং গত ৭ জুলাইও বিল পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন, তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে কোল পাওয়ার জেনারেশন পরিদপ্তরের পরিচালক মাকসুদুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বকেয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা নয়। তবে অর্থসংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্থ মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। তিনি বলেন, তারা চান বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল থাকুক।
বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি তিনি।
দেশে গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্রমেই কমে আসছে গ্যাস সংকটের কারণে। এই ঘাটতি পোষাতে কয়লা ভিত্তিক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে সরকার। এরমধ্যে বাঁশখালীর মতো বড় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। উল্লেখ্য, এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং চলছে, ফলে একটি বৃহৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাব হবে আরও গুরুতর।
বর্তমানে গ্যাস দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ৪ টাকা, আর কয়লায় সেটি হয় প্রায় ৭ টাকা। তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিপিডিবির লো কস্ট জেনারেশন তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ফার্নেস অয়েলের মাধ্যমে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হবে প্রায় ১৮ থেকে ২০ টাকা।
এই কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনে গেলে মাসে প্রায় ৯৫ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। সেই ইউনিট ফার্নেস অয়েল দিয়ে উৎপাদনে সরকারকে অতিরিক্ত প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। এই ব্যয় সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর্থিক ও কারিগরি উভয় দিক থেকেই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।