দেশে অনেকদিন ধরে ঘরে লুকিয়ে রাখা অর্থ এখন ব্যাংকে জমা দেওয়ার কারণে কোটিপতি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা হতে পারে অনেকদিন ধরে টাকা লুকিয়ে রেখেছিল বাড়ির ভিতরে, এখন ব্যাংকে জমা দিচ্ছে। তবে টাকা-পয়সা যে নেই লোকজনের কাছে অনেক ক্ষেত্রে এটা সত্য।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে এই সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭৪টি। পরবর্তী তিন মাস, জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, আরও ৭৩৪টি কোটিপতি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংকে মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টিতে, যা তিন মাসে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি নতুন হিসাবের বৃদ্ধি নির্দেশ করে। একই সময় ব্যাংকে আমানতের পরিমাণও বেড়েছে; জুনে এটি ছিল ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা, এবং সেপ্টেম্বরের শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩১ হাজার ১১৯ কোটি টাকায়। ফলে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৩৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।
কোটিপতি অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে, জুন প্রান্তিকের শেষের হিসাব অনুযায়ী কোটি টাকার বেশি আমানতসহ অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। সেপ্টেম্বর শেষে এটি বেড়ে এক লাখ ২৮ হাজার ৭০টিতে পৌঁছেছে। মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি। তবে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টগুলোর মোট জমা পরিমাণ তিন মাসে কমেছে; জুনে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা থাকলেও সেপ্টেম্বরের শেষে তা কমে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকায় নেমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, ১৯৭২ সালে দেশের কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা মাত্র ৫টি ছিল। এরপর ১৯৭৫ সালে ৪৭টি, ১৯৮০ সালে ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টি ছিল।
সাম্প্রতিক বছরে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আরও বেড়েছে। ২০২০ সালে এ ধরনের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি, ২০২১ সালে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬টি, ২০২২ সালে এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি, ২০২৩ সালে এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি এবং ২০২৪ সালে তা বেড়ে এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টিতে পৌঁছেছে।