সালমান শাহ হত্যা মামলা: সামিরার মা লুসির দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:০০ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
সালমান শাহ হত্যা মামলায় নতুন মোড় এসেছে। চিত্রনায়ক মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এবার তার স্ত্রী সামিরা হকের মা লতিফা হক লিও ওরফে লুসির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) আদালত সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আতিকুল আলম খন্দকারের আবেদনের পর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান এই আদেশ দেন।
আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, লুসিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলছে। তিনি দেশ ত্যাগ করলে তদন্তে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তাই তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার বিদেশ যাত্রা বন্ধ রাখা জরুরি। এ অবস্থায় তাকে ‘স্টপ লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়। আদালত বিষয়টি পর্যালোচনা করে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটিকে প্রথমে আত্মহত্যা হিসেবে ধরা হলেও পরবর্তীতে তার পরিবার দাবি করে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। সালমানের বাবা প্রয়াত কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই তিনি মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন জানান। আদালত তখন সিআইডিকে অপমৃত্যু ও হত্যার অভিযোগ একত্রে তদন্তের নির্দেশ দেন।
১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর সিআইডি তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে। তবে সালমানের বাবা সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন আবেদন করেন।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এর পরদিন, ২১ অক্টোবর, সালমান শাহর মামা মোহাম্মদ আলমগীর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে সালমানের স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
সামিরা ছাড়াও মামলার অন্যান্য আসামির মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি ও সাবেক প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, খলনায়ক আশরাফুল হক ডন, ডেবিট, জাভেদ, ফারুক, মে-ফেয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আব্দুস ছাত্তার, সাজু এবং রেজভি আহমেদ ফরহাদ। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে মোহাম্মদ আলমগীর উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার বোন নিলুফার জামান চৌধুরী, ভগ্নিপতি কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও ভাগ্নে শাহরান শাহ নিউ ইস্কাটনের বাসায় সালমান শাহর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, সালমান ঘুমাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর প্রডাকশন ম্যানেজার সেলিম ফোন করে জানান, “সালমানের কিছু হয়েছে।” তারা দ্রুত বাসায় ফিরে গিয়ে দেখেন, সালমান শয়নকক্ষে নিথর পড়ে আছেন এবং কয়েকজন নারী তার হাত-পায়ে তেল মালিশ করছেন। পাশের কক্ষে সামিরার আত্মীয়া রুবি বসেছিলেন।
আলমগীর জানান, সালমানের মা তখন চিৎকার করে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পথে তারা সালমানের গলায় দড়ির দাগ এবং শরীরে নীলচে চিহ্ন দেখতে পান। পরে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, সালমান শাহ অনেক আগেই মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমার দুলাভাই কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী মৃত্যুর আগে বিশ্বাস করতেন, তার ছেলে খুন হয়েছেন।” তাই তিনি ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই আদালতে দরখাস্ত দাখিল করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে পুনঃতদন্তের আবেদন করেন।
সালমানের বাবার মৃত্যুর পর মামলাটি পরিচালনা করছেন তার মামা মোহাম্মদ আলমগীর। মামলার কোনো আসামি মৃত্যুবরণ করে থাকলে প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।