ছয় লাশ পোড়ানো মামলা: ২০ সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা সম্পন্ন


ছয় লাশ পোড়ানো মামলা: ২০ সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা সম্পন্ন

আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে ১৫তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দিন ধার্য করেছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

বেলা সোয়া ১১টার পর আদালতে বিচারকার্য শুরু হয়। এদিন জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান সাক্ষ্য দেন। তার জবানবন্দির পর পলাতক আট আসামির পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। এ পর্যন্ত মামলায় মোট ২০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহাম্মদ। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান, সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।

এর আগে ২১ অক্টোবর মামলার ১৪তম দিনের শুনানিতে একজন জব্দ তালিকার সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। ১৭ ও ১৮তম সাক্ষী হিসেবে এএসপি এনায়েত এবং শহীদ বায়োজিদ বোস্তামীর ভাই কারিমুল আদালতে জবানবন্দি দেন। ১৬ অক্টোবর ১৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক খান সাক্ষ্য দেন। ৯ অক্টোবর দশম দিনের শুনানিতে শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া ১৪তম সাক্ষী হিসেবে ৫ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দেন।

এছাড়া ৮ অক্টোবর নবম দিনের শুনানিতে এএসআই মনিরুল ইসলাম, ৭ অক্টোবর কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম এবং ২৮ সেপ্টেম্বর একাত্তর টিভির স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিক সাক্ষ্য দেন। ২৫ সেপ্টেম্বর অনিকসহ আরও দুজনের জবানবন্দি নেওয়া হয়, তার আগের দিন প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলামের জেরা শেষ করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর শফিকুল ও মতিবর রহমান সাক্ষ্য দেন।

১৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর দুজন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিনের শুনানি শুরু হয় ১৫ সেপ্টেম্বর, যেখানে শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান সাক্ষ্য দেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। এরপর ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। আদালতে উপস্থিত আটজন আসামির মধ্যে সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন, তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। পরে ট্রাইব্যুনাল তার স্বীকারোক্তির অংশ রেকর্ড করে আবেদন মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে।

গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে আছেন ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। বুধবার সকালেও পুলিশ তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে। অন্যদিকে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।

প্রসিকিউশন গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। এতে মোট ৬২ সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার প্রমাণপত্র, ৩১৩ পৃষ্ঠার তথ্য এবং দুটি পেনড্রাইভ সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরবর্তীতে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখন একজন আহত অবস্থায় জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকেও বাঁচিয়ে রাখা হয়নি। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষটিকেও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

এই মর্মান্তিক ঘটনার এক মাস পর, ১১ সেপ্টেম্বর, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×