কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জামানতবিহীন ঋণ কার্যক্রমে আইএমএফের আপত্তি
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:১৪ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য জামানতবিহীন ঋণের মাধ্যমে তারল্য সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবার এই নীতির কঠোর বিরোধিতা জানিয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখনই এই ধরনের সহায়তা বন্ধ করতে হবে।
গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে এই অবস্থান তুলে ধরা হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে, যা ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের চলমান ঋণ কর্মসূচির ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের আগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলটি ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আগের সরকারের সময় যেসব ব্যাংকে দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল, সেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘লেন্ডার অব দ্য লাস্ট রিসোর্ট’ সুবিধার মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এই ব্যবস্থার আওতায় জামানত ছাড়া প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার নিতে হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিল বা বন্ড জমা দিতে হয়। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত বিল-বন্ড না থাকায় তারা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতিপত্রের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়নি।
আইএমএফ এই পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে এখনই জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সংস্থার মতে, এই ধরনের অর্থ সহায়তা ব্যাংক খাতের আর্থিক শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি।
বৈঠকটি তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় ওপেনিং সেশনে প্রশাসনিক ও নীতিগত বিষয় আলোচনা করা হয়। দুপুর ২টায় দ্বিতীয় ধাপের বৈঠকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট, ঝুঁকি নিরীক্ষা এবং আমানত উত্তোলন সীমা ও প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়। বিকেল ৩টায় শেষ ধাপে তিন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে তারল্য ঘাটতি, আমানত ঘনত্ব, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্স এবং পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে, যা পরে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি করা হয়। এখন পর্যন্ত সংস্থা বাংলাদেশের পাঁচ দফায় মোট প্রায় ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। সর্বশেষ জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় করা হয়। ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের সময় নির্ধারিত হয়েছে আগামী ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নির্ধারিত সময়ে অর্থ ছাড় নাও হতে পারে। আইএমএফ জানতে চাইছে, নতুন সরকার কি সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখবে। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডিসেম্বরে ঋণ ছাড় না হলে আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলের দিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তি একসঙ্গে দেওয়া হতে পারে।