শেখ হাসিনার মামলায় যুক্তিতর্ক শেষ, রায়ের দিন ধার্য হবে কাল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:০১ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় (জুলাই–আগস্ট) সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) হতে পারে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আজ পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা কিছু অংশে জবাব দিয়েছি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে রায় ঘোষণার দিন ধার্য হবে।”
বিকাল সোয়া ৩টার পরে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি টানা তিনদিন যুক্তি উপস্থাপনের পর খালাসের আবেদন করে মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করেন। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ যুক্তি অনুষ্ঠিত হয়।
আইনজীবী আমির হোসেন সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। বিশেষত রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সাক্ষ্য তিনি তুলে ধরেন। পাশাপাশি তাদের দেওয়া সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেননি, তাই জবানবন্দি দিয়েছেন। তার সাক্ষ্য এই মামলায় প্রভাব ফেলবে না।” পরে রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও যুক্তি উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, সুলতান মাহমুদসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, “জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি এবং রাজসাক্ষী হয়ে আদালতকে তথ্য দিতে চাই।”
একই দিনে ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন এবং তাদের আবেদন খারিজ করে মামলা চালানোর আদেশ দেন। প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের নথি মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।