হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আনা হলো ট্রাইব্যুনালে
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:১১ এম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা ১৫ জন কর্মকর্তাকে বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। পুরাতন হাইকোর্ট চত্বরে অবস্থিত ট্রাইব্যুনালে সকাল ৭টার পরপরই তাদের উপস্থিত করা হয়।
এই মামলায় মোট ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ২৫ জন সেনা কর্মকর্তা। মামলাগুলো গুম, খুন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সময় সংঘটিত সহিংসতার অভিযোগ ঘিরে। তিনটি পৃথক মামলায় এসব অভিযোগ গঠিত হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেজর জেনারেল মোস্তফা সরোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, কর্নেল মশিউল রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহম্মেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লে. কর্নেল মখচুরুল হক (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার এবং কর্নেল কেএম আজাদ।
আলোচিত তিনটি মামলার একটিতে অভিযোগ করা হয় যে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গুম ও হত্যার ঘটনায় র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন, যা দাখিল করা হয় ৮ অক্টোবর।
একইদিনে জেআইসি সেলে নির্যাতন ও গুমের অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা, তারেক রহমানসহ আরও ১৩ জনকে আসামি করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেশ করা হয়। এ ছাড়া, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় সংঘটিত সহিংসতায় ২৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এসব মামলায় মোট ২৫ জন সেনা কর্মকর্তা অভিযুক্ত, যাদের মধ্যে ১৫ জনকে ৯ অক্টোবর থেকে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সেনা সদর।
বুধবার সকাল থেকে পুরাতন হাইকোর্ট এবং ট্রাইব্যুনাল এলাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কাকরাইল, পল্টন ও মৎস্য ভবন এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল ওইদিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগগুলোর শুনানি শুরু করে। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলোর প্রাথমিক শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং বিচার শুরুর আদেশ চাওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, “হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন ধার্য রয়েছে। তবে না এলে তাদের হাজির করতে দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর যদি হাজির হন এবং ট্রাইব্যুনাল জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন, তাহলে কোন কারাগারে থাকবেন তা সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারা কর্তৃপক্ষ।”
আদালতে অভিযোগ আমলে নিয়ে বুধবারের মধ্যেই অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ীই সকালে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জনকে হাজির করা হয়। আদালত অভিযোগ গৃহীত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আদেশ দেবে।