১৫ সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী
‘প্রসিকিউশন বলেছে গ্রেপ্তার, আমরা বলি আত্মসমর্পণ’
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:১৯ এম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

বহুল আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তা বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, এটি ছিল 'আত্মসমর্পণ', গ্রেপ্তার নয়।
সকাল ৮টার কিছু পর তিনটি মামলায় শুনানি শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, “গত ৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর সেনা সদর থেকে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়। আজ নির্ধারিত তারিখে তারা স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এটি আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ।”
তিনি আরও জানান, আদালত তাদের পক্ষে ওকালতনামা স্বাক্ষরের অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনটি আবেদন দাখিল করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জামিন, প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন এবং সাবজেলে রাখার আবেদন, যার শুনানি হবে পরবর্তী তারিখে।
সাবজেল বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা জেল কর্তৃপক্ষের বিষয়। বর্তমানে তাদের যে সাবজেল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে নেওয়া হবে। পলাতক আসামিদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।”
আসামিপক্ষের যুক্তি, প্রসিকিউশন যাকে গ্রেপ্তার বলছে, তা আদতে নয়। ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, “টেকনিক্যালি প্রসিকিউশন বলেছে গ্রেপ্তার। তবে আমরা বলি আত্মসমর্পণ। কারণ তারা আজ সকালে স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সুবিধার জন্য তাদের একটা গাড়িতে আনা হয়েছে। নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক সুবিধার কারণে এই ফ্যাসিলিটিটা ব্যবহার করা হয়েছে। তারা প্রকৃতপক্ষে আত্মসমর্পণ করেছে।”
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, “আজ তিনটি মামলার মোট ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”
তিনি জানান, র্যাবের টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ আসামির মধ্যে ১০ জন আজ আদালতে উপস্থিত হন। ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে এই মামলায় পলাতক আসামিদের বিষয়ে জাতীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।
অন্য একটি মামলায় জেআইসি বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গুমের অভিযোগে ১৩ জনের মধ্যে তিনজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। একই আদেশ ও বিজ্ঞপ্তি সেখানে প্রযোজ্য।
তৃতীয় মামলাটি ছিল ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে রামপুরায় সহিংসতায় ২৮ জন হত্যার অভিযোগে। এই মামলায় দুজন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক দুই আসামির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে ৫ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর এই তিন মামলায় মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে প্রসিকিউশন। এরপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং ২২ অক্টোবর শুনানির দিন নির্ধারণ করে। মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে ১৭ জন, আরেকটিতে ১৩ জন এবং তৃতীয়টিতে ৪ জন করে আসামি রয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। সেনাসদরের তথ্যমতে, অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১১ অক্টোবর ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
যেসব সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে তারা হলেন:
র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
এই দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোর থেকে ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট এলাকা ঘিরে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।