‘শাপলা চত্বরে দু-চারজন লোক মারা যেতেও পারে’: ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার আইনজীবী
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:২২ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৫

শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের অভিযানে কোনো গণহত্যা হয়নি বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তার ভাষ্য, ওই ঘটনায় “দু-চারজন” নিহত হয়ে থাকতে পারে, তবে সেটিকে গণহত্যা বলা ঠিক নয়।
আজ ২০ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এই আইনজীবী। মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতা এবং এর পেছনে দায়ী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন তিনি। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন তার বক্তব্যে প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগ খণ্ডন করেন এবং বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সরকার বৈধ ব্যবস্থা নিয়েছিল।
শাপলা চত্বরে অভিযানের প্রসঙ্গে আইনজীবী বলেন, “শাপলা চত্বর আমার নিজের চোখে দেখা। যেদিন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যার কথা বলা হয়। এর আগের দিন সারা ঢাকা শহরের বিশেষ করে পল্টন, বায়তুল মোকারম এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। বেশ মোটা মোটা গাছ তারা মাঝখান দিয়ে কেটে ফেলেছে। করাত পেলো কোথায়? তারা এসব ব্যবস্থা করেই এসেছে। বাড়িঘরসহ অফিস-আদালতেও ভাঙচুরসহ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব করেছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যদি সরকার তাদের সমাবেশকে প্রতিহত করে বা প্রতিহত করতে সাউন্ড গ্রেনেড অথবা একটি গণজমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করে; তারা যেন কোনোরকম অপকৌশল করে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে, রাষ্ট্রের জানমালের ক্ষতি না করতে পারে, সেজন্য বৈধ উপায়ে তাদের যদি ছত্রভঙ্গ করা হয়, সেটা কি অপরাধ ছিল? সেই সময়কে বলা হয় গণহত্যা।”
এরপর ট্রাইব্যুনাল জানতে চায়, ওই অভিযানে কেউ নিহত হয়েছিল কি না। জবাবে আমির হোসেন বলেন, “ওই সময় দু-চারজন লোক মারা যেতেও পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে বলা হয় গণহত্যা। গণহত্যা মানে বিরাট ব্যাপার। হাজার হাজার লোক মারা যাওয়ার অর্থ হলো গণহত্যা। আর একটা সম্প্রদায়কে নিঃশেষ করার নাম হলো গণহত্যা।”
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার সময় ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আমির হোসেন বলেন, “কোথায়, কোথায় মারা গেছে। ৩০ জন মারা গেলে সারা বাংলাদেশে ৩০টা জিডি বা অভিযোগ থাকবে। অথচ কোথাও কোনো অভিযোগ নেই লর্ডশিপ। সেখানে বেশিরভাগ এতিম শিশু ছিল। তাদের যারা নিয়ে আসছে আমি তাদের ধিক্কার জানাই। কারণ, ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেদের তারা আন্দোলনে নামিয়েছে। আমি নিজে দেখেছি। বাচ্চা ছেলেদের নামিয়ে তারা বড় অপরাধ করেছে। বাচ্চারা কী বোঝে আন্দোলনের?”
তখন ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলে, “এজন্য বাচ্চাদের মেরে ফেলতে হবে?” উত্তরে আমির হোসেন বলেন, “আমি তো মারছি তা বলছি না। মাননীয় লর্ডশিপ বলেছে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল তাকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর একটি প্রতিবেদন দেখার নির্দেশ দেয় এবং জানায়, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে অন্তত ৬১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
জবাবে আমির হোসেন বলেন, “তারা জানিয়েছে, তারা পত্রিকায় দিয়েছে। এটা আমার অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এখানে ৩০-৬১ বা যাই হোক মারা গেছে কিনা; মারা যাওয়ার পেছনে প্রথম প্রমাণ কী। মাই লর্ডশিপ তর্ক-যুক্তির খাতিরে ধরেই নিলাম যে শেখ হাসিনার আমলে কেউ কোনো কথাই বলতে পারেনি।”
এই পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল জানান, আইন অনুযায়ী পত্রিকার প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে আমির হোসেন বলেন, “রেকর্ড নেওয়ার সুযোগ আছে। আপনি নেবেন। কিন্তু যেসব প্রতিবেদনের কথা বলেছেন সে প্রতিবেদনের বক্তব্যগুলো আপনি গ্রহণ করবেন। দেখবেন, শুনবেন। তবে সেটাকে আপনি বাইবেলের বা আসমানি বাণী হিসেবে নিতে পারবেন না। আপনারা বিবেচনায় নেবেন যে এটা আসলেই সঠিক কিনা। কারণ, ধরে নিলাম ৩০ জন মারা গেছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর শাপলা চত্বরের এই গণহত্যার প্রেক্ষাপটে ৩০ নয়, পাঁচজন লোকও কি একটি জিডি করেছেন। পাঁচজন লোক এসে কি বলেছে যে আমার সন্তান ওই সময় মারা গেছে। কোনো লোক এসে বলেছে কি আমার এতিম পুত্রটাকে আমি পাইনি। কোথাও এমন কোনো বক্তব্য পত্রপত্রিকায় আসেনি।”
শেষে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, এ নিয়ে কোনো মামলা দায়ের হয়েছিল কি না। শুরুতে তা অস্বীকার করলেও পরে ট্রাইব্যুনাল থেকে জানানো হয় যে, এ-সংক্রান্ত মামলা হয়েছিল।