‘চুপ থাকো, তোমার জন্য এসব হয়েছে’: মতিউরকে বললেন তার স্ত্রী


‘চুপ থাকো, তোমার জন্য এসব হয়েছে’: মতিউরকে বললেন তার স্ত্রী

ছাগলকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালতে তারা প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এক পর্যায়ে মতিউর মেজাজ হারিয়ে কথা বলতে গেলে, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ধমক দিয়ে বলেন, "তুমি চুপ থাকো। তোমার জন্য এসব হয়েছে।" এরপর মতিউর চুপ হয়ে যান।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে আসামিদের কারাগার থেকে হাজির করা হয়। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তাদের হাজিরা হয় এবং মতিউরের এক হাত থেকে হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়, অন্য হাতে সেটি ঝুলে থাকে। মতিউরের মাথা থেকে হেলমেট ও বুক থেকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটও সরিয়ে নেওয়া হয়। তার স্ত্রী লায়লা কানিজের বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।

এরপর তারা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। কখনো মতিউর, কখনো লায়লা কানিজ মামলা ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা কীভাবে মামলা মোকাবিলা করবেন, সেটাও আইনজীবী বুঝিয়ে দেন। মতিউর কথা বলতে গেলে লায়লা তাকে ধমক দেন, "তুমি বেশি কথা বলো। চুপ থাকো। আমি বলছি। তোমার জন্য এসব হয়েছে।" স্ত্রীর এই ধমকের পর মতিউর দমে যান এবং এরপর লায়লা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন, মতিউর কানে কানে তাকে ফিসফিস করে কিছু বলেন।

কাঠগড়ায় কথা বলার সময় পাশ থেকে একজন নারী (যিনি লায়লার বোন হিসেবে পরিচিত) এসে লায়লা কানিজকে বলেন, "এখানে সাংবাদিক আছে। সাবধানে কথা বল।" এরপর সবাই কথা থামিয়ে সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তবে আলোচনা বন্ধ হয়নি। পরে হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল লায়লা কানিজের কানে কিছু বলেন।

দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে আসামিদের স্বজন লায়লার বোন একটি পানির বোতল দেন, আইনজীবী তাদের খেতে বলেন। মতিউর পানির বোতল নেননি, লায়লা অস্বীকার করেন, পরে মতিউর পানি পান করেন।

২টা ৩৫ মিনিটে বিচারক আসেন এবং আসামিরা কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে শুনানি শুরু করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার তাদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, "ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে তারা টাকা হাতিয়ে নেন। ওই কোম্পানি আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে তারা টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।"

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান (লিটন ঢালী) রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, "দুদক প্রসিকিউটর যে বক্তব্য দিল, মামলার এজাহারের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। মতিউর রহমানের কন্যা ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা দীর্ঘদিন কানাডায় আছেন। তিনি তার সম্পদ বিবরণী আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে জমা দিয়েছেন। ঈপ্সিতা ডেল্টা লাইফে চাকরি করতেন না। তিনি এজেন্সির মালিক ছিলেন। সে অনুযায়ী বেতনও পেতেন। ট্যাক্স ফাইল দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঈপ্সিতা সম্পদ বিবরণীতেও যদি বলে বাবার সম্পত্তি আছে, এরূপ একটা শব্দ বললে আপনি রিমান্ড দিতে পারেন।"

আইনজীবী আরও বলেন, মতিউর রহমান অসুস্থ, তার প্রেসার ১৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে। তার বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করছি। প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রার্থনা করছি।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুনানি শেষে মতিউরকে স্ত্রীর ধমকানোর ব্যাপারে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ধমকানো বিষয়টি “এমন না। মতিউর রহমান আদালতে কথা বলতে চেয়েছিল। তখন তার স্ত্রী নিষেধ করেন। কারণ আদালতে বলা না বলা সমান। এখানে বলে লাভ নেই।”

কাঠগড়ায় লায়লা কানিজের সঙ্গে কী কথা হলো জানতে চাইলে হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল বলেন, "কাঠগড়ায় এত কথা না বলার জন্য বলি।"

তিনি আরও জানান, দুপুরে লায়লা কানিজ খাবারের কথা বলেন, কিন্তু হাজতখানার নিয়ম অনুযায়ী বাইরে থেকে খাবার দেয়া হয় না। সরকারিভাবে কলা, রুটি ও পানি দেওয়া যায়। পরে লায়লা তা নেননি।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে অসদু্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপন করেছেন। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অপরাধলব্ধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পত্তি অর্জন করে ভোগদখল রাখার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।

তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যও রয়েছে। এর সঙ্গে অন্য কারো সম্পৃক্ততা আছে কি না তা জানতে হবে।

এছাড়া, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে অর্জিত ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পত্তি অর্জনে সহযোগিতার বিষয়ে মতিউর ও লায়লা কানিজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×