কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলির ঘটনায় অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি শুরু


কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলির ঘটনায় অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি শুরু

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলছিলেন আমির হোসেন। তাকে গুলি চালানোর পাশাপাশি ওই ঘটনায় দুইজন নিহত হওয়ার বিষয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল, যা চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত, এ শুনানি পরিচালনা করে। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, পাশাপাশি প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

এদিন রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় এবং তার উপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আগেই, ১ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে ট্রাইব্যুনাল স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন এবং অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম শুনানি করেন। এই মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পলাতক চার আসামির পক্ষে সরকারিভাবে লড়বেন শেখ হাসিনার আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

২৫ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-১ পলাতক চার আসামিকে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। হাবিবুরের বাইরে বাকি তিন আসামি হলেন খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। তাদের বিরুদ্ধে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

৭ আগস্ট প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রামপুরায় একটি হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় ফুফুর বাড়িতে ফিরছিলেন আমির হোসেন, যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশের ও বিজিবির গাড়ি দেখে ভয় পেয়ে তিনি পাশের একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন। পুলিশ তার পিছু নেয় এবং জীবনের জন্য হুমকি অনুভব করে ভবনের ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন। পুলিশ তাকে দেখে ছয়টি গুলি ছোড়ে, তিনি তিন তলায় পড়ে যান। চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়, এরপর রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর বাড়ি ফেরেন তিনি।

সেই একই দিনে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসাও গুলিবিদ্ধ হয়, যিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন এবং এখনও কথা বলতে পারেন না।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে আমির হোসেনকে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×