জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০২:২৭ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
.jpg)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এ কার্যক্রম চলে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ আরও কয়েকজন। সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জেরা করেন।
মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত ৩ আগস্ট। সেদিন প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ। এরপর ৪ আগস্ট সাক্ষ্য দেন পঙ্গুত্ববরণ করা শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও দৃষ্টি হারানো দিনমজুর পারভীন। ৬ আগস্ট সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক।
১৭ আগস্ট চারজন সাক্ষ্য দেন সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম। ১৮ আগস্ট আসেন শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল এবং রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন।
২০ আগস্ট ষষ্ঠ দিনে সাক্ষ্য দেন চারজন, তাদের মধ্যে ছিলেন নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, ইবনে সিনার সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না এবং শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল।
২৪ আগস্ট তিনজন সাক্ষ্য দেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অফিস সহকারী গিয়াস উদ্দিন, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম এবং স্থানীয় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম। পরদিন ২৫ আগস্ট আরও পাঁচজন জবানবন্দি দেন, তাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস, শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার ও শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম।
সাক্ষীরা তাদের জবানবন্দিতে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট ২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড হয়েছে।
মামলার তিন আসামির মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। বাকিরা এখনও পলাতক রয়েছেন। সোমবার সকালে মামুনকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে তাদের বিরুদ্ধে। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, দালিলিক প্রমাণ ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। মামলায় সাক্ষী হিসেবে আছেন মোট ৮১ জন।