বিচার বিভাগের সংস্কার ৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে: প্রধান বিচারপতি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:২৫ এম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিচার বিভাগে ঘোষিত সংস্কার কর্মসূচির প্রায় ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সরকারের সহযোগিতা পেলে অবশিষ্ট উদ্যোগগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: বিচার বিভাগের সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বিচার কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের আচরণে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশের প্রতিটি আদালতে সংস্কারের প্রসার ঘটাতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনতা ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। “বিচার বিভাগকে ন্যায্যতা, সাহস ও সততার সঙ্গে জনগণকে সেবা দিতে হবে,” বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটি প্রতিষ্ঠা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ সাংবিধানিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।”
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লেখ করেন, বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা মূলত বিচারক নিয়োগের ন্যায্যতার ওপর নির্ভরশীল। “একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হলো সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল চালু হওয়া। এর মাধ্যমে কলেজিয়ামভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ল্যাটিমার হাউস নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
তিনি জানান, এ কাউন্সিলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। “স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার মানদণ্ড মেনে দেওয়া এসব নিয়োগ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে এবং তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করেছে যে যোগ্যতা ও সততাই এখন বিচারক নির্বাচনের মূল ভিত্তি।”
বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত আদালত গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “ন্যায়বিচার যেমন স্বাধীনতার ভিত্তি, তেমনি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাণিজ্যিক ন্যায়বিচার অপরিহার্য। দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা হতাশায় ভোগেন। তাই প্রশিক্ষিত বিচারক ও ডিজিটাল ফাইলিং ব্যবস্থাসহ বিশেষায়িত আদালত গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খসড়া প্রস্তুত এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।”
তার মতে, এসব আদালত চালু হলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুততা আসবে এবং দেশ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে। আইন বিশেষজ্ঞদেরও অভিমত—এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়িক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এতে আরও বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সূত্র: বাসস