১৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন: সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লাক মিয়ার ৪ দিনের রিমান্ড
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:৫২ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লাক মিয়াকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা মামলায় সোমবার (২৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান এই আদেশ দেন।
সোমবার লাক মিয়াকে আদালতে হাজির করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত তার বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তিনি শুনানিতে জানান,
"আসামির ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এসব টাকার উৎস জানতে রিমান্ড প্রয়োজন।"
এ সময় দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে ১৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। এর মধ্যে এক কোটি টাকার ঘুস। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও বিচার হবে। যদি তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ না পাওয়া যায় তাহলে শুধু জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলা চলবে। তিনি ঘুস নিয়েছেন, দুর্নীতি করেছেন—সেটা জানতেই জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।”
তিনি আরও জানান, লাক মিয়ার বিরুদ্ধে ৫৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে, যেখানে বৈধ উৎস হিসেবে তিনি দেখাতে পেরেছেন মাত্র তিন কোটি টাকা।
আসামিপক্ষে আইনজীবী মোবারক হোসেন রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে বলেন, “লাক মিয়া ১৯৯০ সাল থেকে ব্যবসা করছেন এবং ২০১১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার পৈতৃক সম্পত্তিও রয়েছে। যদি এত বড় অস্বাভাবিক সম্পদ থাকত, এনবিআর এতদিনে ব্যবস্থা নিত। তার হার্টে পাঁচটি রিং রয়েছে, তিনি নিয়মিত কর দিয়ে যাচ্ছেন ও পরিস্থিতির শিকার। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই।”
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মন্তব্য করেন, “আসামি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।” এ কথা বলেই তিনি লাক মিয়ার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, চলতি বছরের ৬ মার্চ লাক মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লাক মিয়ার নামে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তার ৪৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকারও বেশি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বাবুর আশীর্বাদে লাক মিয়া অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হন। এক দশক আগে যিনি ছিলেন সাধারণ মানুষ, তিনিই পরবর্তীতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৪৫০ বিঘা জমি ও ১১টি বহুতল ভবনের মালিক হন। এই সম্পদ সংগ্রহের সময়কাল মূলত তার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়—২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত।