জাহাজে সাত খুন: জড়িতদের শাস্তিসহ পাঁচ দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন


জাহাজে সাত খুন: জড়িতদের শাস্তিসহ পাঁচ দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রামের নাবিকরা। সমাবেশের নাবিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ নাবিক ঐক্য পরিষদ ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আল বাখেরা জাহাজের নিহত সাতজন নাবিকের পরিবারকে সরকার কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নৌ-পথে নাবিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সব নাবিকদের গেজেট অনুযায়ী বেতন ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও বাংলাদেশের নাবিক সংগঠনগুলোর এবং নেতৃবৃন্দের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর আগেও দুর্নীতিবাজ নেতারা চট্টগ্রাম লাইটারেজ জাহাজের সিরিয়াল নীতিমালা প্রণয়ন করে বিভিন্ন জাহাজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে।’ 

‘নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহালম ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক পটল সাহেব, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক, আফছার উদ্দিন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা সবুজ শিকদারসহ আরো অন্যান্য সংগঠনগুলোর নেতারা বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক নাবিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে।’

বক্তারা বলেন, ‘আমরা সাধারণ নাবিক ঐক্য পরিষদ নৌসেক্টরে নাবিকদের থেকে উত্তোলনকৃত মাসিক টাকার হিসেব চাই এবং যে-সব নেতারা দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, সে সসব নেতাদের অবৈধ সম্পদের হিসাব তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হোক।’  

সাধারণ নাবিক ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘নৌ-সেক্টরে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি নিত্য দিনের ঘটনা। তবে এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা বিগত কয়েক যুগেও ঘটেনি। বিগত দিনে যে-সব ডাকাতি ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় যথাযথ বিচার না করার কারণে আজকের এই পরিস্থিতি শিকার হয়েছে আমাদের কিছু নাবিক ভাই। যা মেনে নেওয়ার মত নয়। ডাকাত ঠিকই ডাকাতি করছে, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী তারাও নৈরাজ্য করছে তাহলে আমাদের প্রশ্ন পুলিশ প্রশাসন কি করছে। নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি কেন করা হয়েছে। এই মেরিন সেক্টর এত বড় একটা শিল্প হওয়ার পরেও আমাদের নিরাপত্তায় এত অবহেলা কেন?’

তিনি আরো বলেন, ‘ভিএইচএফের মাধ্যমে কোন নৌ-পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডের সাহায্য পেলাম না। ৯৯৯ পরিষেবা কেন নিতে হল, এটা তো সব স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নাগরিক পরিষেবা। অথচ আমাদের শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নৌ-পুলিশ, নৌবাহিনী কোস্টগার্ড সজাগ না থাকার কারণ কি। এই ঘটনার দায়ভার যে অঞ্চলে ঘটেছে, সেই অঞ্চলের নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডকেই নিতে হবে। পাশাপাশি, বিগত দিনে এত ঘটনা ঘটছে, ধারাবাহিকভাবে আমাদের নৌ-শ্রমিক সংগঠনগুলোর স্বার্থান্বেষী কিছু নেতা কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের সিরিয়াল বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। যা একান্তই মালিক পক্ষের কাজ। তারা যদি প্রশাসনের এই গাফিলতির তদারকি ও প্রতিবাদ করত, তাহলে হয়ত আজকের এই ঘটনা ঘটত না।’

যুগ্ম সমন্বয়ক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘কিছু জাহাজ মালিক রয়েছে ৫-৬ মাস পর্যন্ত নাবিকদের বেতন বকেয়া রেখে দেয়। নাবিকরা যখন তাদের পরিবারের অসচ্ছলতার বিষয় মালিকদের কাছে তুলে ধরে এবং বকেয়া বেতন দাবি করে, ঠিক তখনই এই জুলুমকারী জাহাজ মালিকরা অসহায় নাবিকদের বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে চাকরিচ্যুত করে। আর এসব বিষয় আমাদের কিছু নাবিক সংগঠন রয়েছে, তাদেরকে জানানো হয় এবং এই সংগঠনগুলো নাবিদের টাকায় পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও তারা কোন গঠনমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে মালিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা খেয়ে নাবিকের দেওয়া অভিযোগ চাপা দিয়ে রাখে। এই সংগঠনের কথিত নেতাগুলো সংগঠনের গঠনতন্ত্র না মেনে বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের আমলে ক্ষমতায় বসে এখনো পর্যন্ত সাধারণ নাবিকের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছে।’

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×