সচিবালয়ের পথে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, আন্দোলন দশম দিনে
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:৩৯ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

দশ দিনে পা রাখলেও আন্দোলনে কোনো শিথিলতা নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতার তিন দফা দাবিতে আজও আন্দোলনে দৃঢ় অবস্থানে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গলবার সকাল থেকেই চলছে তাদের অবস্থান কর্মসূচি, আর দুপুরে তারা শাহবাগে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা। শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিকার না হওয়ায় তারা এই কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছেন।
আন্দোলনরতদের অন্যতম সংগঠন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট-এর সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানিয়েছেন, আজ সকালে সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন,
“আমাদের সঙ্গে আলোচনা চাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা সচিবালয়ে আলোচনার জন্য যাব। সরকার কি প্রস্তাব দেয় তা নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
দীর্ঘ আন্দোলনের সূত্রপাত ১২ অক্টোবর থেকে। প্রথমে তিন দফা দাবি থাকলেও, গত ১৭ অক্টোবর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি; সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হলেও জাতীয় বেতন স্কেলে নিয়োজিত, অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত মূল বেতন পান। কিন্তু বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। আগে বাড়িভাড়া ভাতা ছিল মাসে ১ হাজার টাকা, যা দুই ধাপে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হলেও শিক্ষকরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয়। তারা মূল বেতনের শতকরা ২০ ভাগ হারে এই ভাতা চান। একইভাবে, ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবিও আছে তালিকায়।
উৎসব ভাতা নিয়েও রয়েছে আলোচনা। পূর্বে শিক্ষকরা বছরে দুইবার মূল বেতনের ২৫ শতাংশ করে উৎসব ভাতা পেতেন। গত মে মাসে সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। এবার সেটিকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলন চলছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, আন্দোলনকারীরা বলছেন এগুলো ‘অপর্যাপ্ত’। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানালে, শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠায় অর্থ বিভাগে, যাতে বাড়িভাড়া ভাতা অন্তত ২ হাজার বা ৩ হাজার টাকা করা হয়। এর মাঝেই ১৯ অক্টোবর আবার ঘোষণা আসে, ভাতা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটি তাদের দাবি পূরণের ধারে-কাছেও নয়।
এদিকে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-শিক্ষক সংগঠন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও প্রকাশ্য সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন।