কিশোরীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, চিৎকার আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান
- সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:৩৪ এম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ১৪ বছর বয়সী এক মাদরাসাছাত্রীকে জোরপূর্বক একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী পরিবার দাবি করেছে, অভিযুক্তরা ওই কিশোরীর আর্তনাদ বাইরে পৌঁছানো আটকাতে উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়েছিল।
এই জঘন্য ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা ছয়জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কামারখন্দ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত হলো নাইম হোসেন।
ভুক্তভোগী কিশোরীটি কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত নাইম হোসেন চর কামারখন্দ গ্রামের রহমত আলীর ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার সকালে কিশোরীটি মাদ্রাসায় গিয়েছিল। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সে মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি দোকানে কলম কিনতে বাইরে আসে। সেই সময় নাইম নামের ওই যুবক তাকে জোর করে একটি সিএনজিতে তুলে নেয়। এরপর তাকে কামারখন্দ সেন্ট্রাল পার্ক সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত 'ডেরা ফাস্ট ফুড এ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট'-এর ভেতরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
নাইম হোসেনের এই অপরাধে পাঁচ বন্ধু তাকে সহায়তা করে। তারা হলো জামতৈল এলাকার মো. ইমরান (২১), আকাশ (২১), মো. আতিক (২৩), নাছিম উদ্দিন (২০) এবং নাজমুল হক নয়ন (২০)।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রেস্টুরেন্টের ভেতরে যখন কিশোরীটিকে ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন তার চিৎকারের শব্দ যেন বাইরে না যায়, সেজন্য উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়। অন্যদিকে, রেস্টুরেন্টের বাইরে পাহারা দিচ্ছিল ইমরান, আকাশ, আতিক, নাছিম উদ্দিন ও নাজমুল হক নয়ন।
ভুক্তভোগী কিশোরীর মা অভিযোগে বলেন, "আমার মেয়ে প্রতিদিনের মতো মাদ্রাসায় যায়। মাদ্রাসা ছুটি হওয়ার পরেও যখন বাড়ি আসেনি, তখন খোঁজাখুঁজি করি। তখন হঠাৎ করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মুঠোফোনে কল দিয়ে জানায় আপনার মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় সিরাজগঞ্জ কমিউনিটি ক্লিনিকে আছে। পরে আমরা সেখানে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ। সেখান থেকে তাকে এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।"
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, "আমার মেয়েকে ওই বখাটেরা জোর করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। সোমবার সকালে ডাক্তার তার বিশেষ অঙ্গে অপারেশন করেছে।"
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক পার্থ সাহা জানান, ওই কিশোরীর বিশেষ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রাথমিকভাবে মত দেন যে, জোর করে শারীরিক সম্পর্কের কারণেই বিশেষ অঙ্গ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরা সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের জন্য রেস্টুরেন্টটিতে যান। সেখানে কয়েকজন যুবককে আড্ডা দিতে দেখা যায়। সাংবাদিকদের দেখে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করে এবং আলামত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রেস্টুরেন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।
কামারখন্দ থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আকতার নিশ্চিত করেন, আলামত সংগ্রহের জন্য রেস্টুরেন্টটি বিকেলে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ জানান, কিশোরীর মা বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন এবং এই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।