নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক: ফখরুল
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:০৯ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনকে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে দলের চেয়ারম্যানের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে প্রস্তাবিত গণভোট করা সম্ভব নয়। সময়ের স্বল্পতা, নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিপুল ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অন্যান্য লোকবল নিয়োগ; এই সব বিষয় বিবেচনা করলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বড় আয়োজনের আগে গণভোট আয়োজন অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যেসব বিষয় আলোচনায় আসে নাই তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যান্য সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য। আমরা একমত হতে পারছি না। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, এই সুপারিশগুলো কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের ক্ষতি হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার সম্পন্ন না হয়, তাহলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে; এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যেকোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে আইন হিসেবে কার্যকর হয়। স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং এটি গণতন্ত্র ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।’
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘বিকল্প-২ প্রস্তাবে জুলাই সনদ আদেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরাসরি গণভোটে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। তবে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত, ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তা গণভোটে উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়নি।’
ফখরুল বলেন, ‘দফাসমূহের বিপরীতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপক্ষীয়ভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রায় এক বছরের আলোচনার প্রক্রিয়া অর্থহীন, সময় ও অর্থের অপচয় এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক এবং সংলাপের প্রয়োজন পড়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি।’
বিএনপির ৩১ দফা, ২৭ দফা এবং ভিশন-২০৩০ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্বিক সংস্কারের অঙ্গীকার জানিয়ে এসেছে। তাই রাষ্ট্র কাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ অনুযায়ী, নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সকল অনুষ্ঠান বিটিভি ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে। ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত সনদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছি। তবে ওই দিনে জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরবর্তীতে প্রিন্টেড কপি হাতে পাওয়ার পর দেখা গেছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা অগোচরে সংশোধন করা হয়েছে। যেমন- শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন অফিসে টাঙানোর বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] বাদ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) বাতিল করার বিষয়ে সর্বাধিক রাজনৈতিক দলের সম্মতি থাকলেও তা চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।