বাংলাদেশকে ই-কমার্স হাবে পরিণত করে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চায় বিএনপি: তারেক রহমান
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:০১ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করে আনতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এমন খাত যুক্ত করতে হবে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শুধু পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে আমাজন, ই-বে ও আলিবাবার মতো ই-কমার্স জায়ান্টদের সরবরাহকেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ।”
আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান জানান, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ ভিত্তিক একটি পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করবে, যা বর্তমান ‘একপেশে’ সম্পর্ককে পুনর্গঠিত করবে।
২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান বলেন, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জিতব। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এককভাবে সরকার গঠন করতে পারব। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মাটিতে আমার ফেরার সময় এখন খুব কাছে।”
তারেক রহমান বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার "স্বৈরশাসন"কে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছিল, সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত সাফল্য তখনই অর্জিত হবে, যখন দেশে অবাধ ও “বিশ্বাসযোগ্য” নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এফটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে পরবর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক চাপের মুখোমুখি হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত, আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও টানাপোড়েন রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
এফটি আরও জানায়, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি'রই সরকার গঠন করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে এবং তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, যার প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস; ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান ড. ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে "ফ্যাসিস্ট" দল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বিএনপি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার গঠনে আগ্রহী, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দলটির সঙ্গেও। তিনি বলেন, “আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব, তারা তরুণ, তাদের ভবিষ্যৎ আছে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের পুত্র তারেক রহমান বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তিনি জানান, ক্ষমতায় এলে বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করবে এবং ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে দলের প্রায় ৭,০০০ নেতা-কর্মীকে দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কার বা শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগকে আবার রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে কি না; এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি তিনি। বরং তিনি বলেন, “যদি তারা অপরাধী হিসেবে দণ্ডিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে?”
তারেক রহমান জানান, ক্ষমতায় এলে তাঁর সরকার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বিদেশে পাচার করা শত শত কোটি ডলার ফেরত আনার উদ্যোগে ইউনূস প্রশাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস মনে করিয়ে দেয়, বিএনপি’র আগের শাসনামলে (২০০১-২০০৬) বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল।
এছাড়া, এফটি উল্লেখ করে, ২০০৮ সালে ফাঁস হওয়া এক মার্কিন কূটনৈতিক বার্তায় তারেক রহমানকে “দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ও সহিংস রাজনীতির প্রতীক” হিসেবে বর্ণনা করা হয় এবং বলা হয়, তিনি “প্রকাশ্য ও নিয়মিতভাবে ঘুষ নেওয়ার জন্য কুখ্যাত” ছিলেন।
এই বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, “যে কোনো সরকারেরই কিছু দুর্বলতা থাকে,” তবে তিনি দাবি করেন, বিএনপি সরকারের আমলেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠিত হয়েছিল, যা তাঁদের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রমাণ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে “মিথ্যা বয়ান” প্রচার করা হয়েছিল, যা পরে ওই মার্কিন বার্তার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিনি জানান, “আমার বিরুদ্ধে আনা সব মামলাই এখন বাতিল হয়েছে।”