নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:৫৬ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তিনি বলেন, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা পূরণে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এখন পুলিশের কাঁধে। সকলের আশা, পুলিশ এমন একটি মানদণ্ড স্থাপন করবে যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত হবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ‘হল অব প্রাইড’ কনফারেন্স রুমে বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়, ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়।”
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী মাঠে তাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, বরং জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের প্রতীক হিসেবে কাজ করা।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও আলোচনা শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত, সুবিধা দেওয়া বা নেওয়া এবং নিজেদের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ভাবার প্রবণতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরিতে সরাসরি জড়িত।” জামিনে থাকা অনেক অপরাধী পুনরায় অপরাধে জড়াচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অপরাধ দমন ও ফ্যাসিস্টদের অপপ্রচার, অপরাজনীতি ও হঠাৎ সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে গ্রেপ্তারের কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন উপদেষ্টা, তবে নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেন।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অধস্তন অফিসার ও সদস্যদের মধ্যে পেশাদারিত্ব, দলীয় চেতনা, শৃঙ্খলা ও মনোবল বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা পেশাদারিত্বে ঘাটতি রাখে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
জেলা পর্যায়ে নিয়মিত কোর কমিটির সভা আহ্বান, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং মিথ্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চকে আরও সক্রিয় করে প্রতিটি জেলার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
এছাড়া থানা থেকে লুট হওয়া, হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের ওপর কোনো ধরনের হামলা সহ্য করা হবে না এবং এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তরুণ পুলিশ কর্মকর্তাদের এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। সিসকো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা এতে অংশগ্রহণ করেন।