স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে আস্থা কমেছে, ঋণ খেলাপি ও আমানত সংকট বৃদ্ধি
- ফরিদ শ্রাবণ
- প্রকাশঃ ০৭:২১ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসির ওপর গ্রাহক আস্থা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের আমানতে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গ্রাহকদের আমানত কমেছে ৬৭ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকের ঋণ খেলাপির হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি কম হলে সেটি স্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী ও সুস্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়। পাশাপাশি, ধারাবাহিকভাবে গ্রাহক আমানত বৃদ্ধি পেলে ব্যাংকটির বাজারে ভালো খ্যাতি অর্জন হয়। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিস্থিতি উল্টো দিকে যাচ্ছে।
১৯৯৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করা এই ব্যাংকের ঋণ খেলাপি এবং কমতে থাকা আমানতের কারণে গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হয়েছে ২৯.৩১ শতাংশ, যেখানে ২০২৩ সালে তা ছিল মাত্র ৭.১২ শতাংশ।
টাকার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঋণ খেলাপি হয়েছে ৫,৯৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা ২০২৩ সালের ১,৩৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার তুলনায় ৩,৩৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত কোনো ব্যাংকের ঋণ খেলাপি ৫ শতাংশের বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য হয়। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
গ্রাহকদের আমানতও ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকে আমানত ছিল ২,৬৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯০ কোটি ১২ লাখ টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে প্রায় ১,৭৭৫ কোটি টাকা।
কোম্পানি সূত্র জানায়, ব্যাংকটি বর্তমানে গুরুতর তারল্য সংকটে রয়েছে। এ কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রুলস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি পূরণ করতে পারেনি। ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতির প্রয়োজন ছিল ৪,১৬৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৭৮২ কোটি ৯০ লাখ টাকা রেখেছে, ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩,৩৮৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
ব্যাংকের নিট সুদজনিত আয়ও হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে নিট সুদজনিত আয় ছিল ৩২৮ কোটি ৫ লাখ টাকা, যেখানে ২০২৩ সালে তা ছিল ৩৪৬ কোটি টাকা। নিট প্রফিটও কমেছে ৪০ শতাংশ—২০২৩ সালে ১৩৬ কোটি টাকা থেকে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ঢাকাওয়াচ কে বলেন, “স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়নি। ব্যাংকটি কনভেনশনাল থেকে ইসলামি শরিয়াহ বেসড ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে, কিন্তু এরপরও সুবিধা করতে পারেনি। ব্যাংকটি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আমরা ব্যাংকটিকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছি।”
এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদককে তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ দেখান।
উল্লেখ্য, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ১১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৩৭.৪৯ শতাংশ, উদ্যোক্তা পরিচালক ৩৩.০৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ২৯.৩৫ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ০.০৮ শতাংশ। ২৬ অক্টোবর ব্যাংকের শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৫.৩০ টাকা।