শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুন বেড়েই চলেছে, ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে আকাশ
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:২৭ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আকাশ ছেয়ে গেছে ঘন কালো ধোঁয়ায়। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হলেও কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তা এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
প্রচণ্ড আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। পাশাপাশি সহায়তায় যুক্ত হয়েছে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও। পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে ওঠায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানান, “বিমান চলাচল সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে।”
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা তাহলা বিন জসিম বলেন, “বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে আমাদের ৩৬টি ইউনিট। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।”
সূত্র জানিয়েছে, আগুন প্রথমে কার্গো ভিলেজের ভেতরে দেখা গেলেও তা মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে মাত্র পাঁচটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয় ইউনিট সংখ্যা। বর্তমানে ৩৬টি ইউনিটের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে নৌ ও বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুনের লেলিহান শিখা এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী ক্রমেই বাড়ছে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে বিকল্প গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আসা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট এবং এয়ার এরাবিয়ার শারজাহ থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। একইসঙ্গে দিল্লি থেকে আসা ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট নামানো হয়েছে কলকাতায়। কুয়ালালামপুরগামী বাটিক এয়ারের ওডি-১৬৩ এবং মুম্বাইগামী ইন্ডিগোর ৬ই-১১১৬ ফ্লাইট দুটি বর্তমানে ট্যাক্সিওয়েতে আটকে আছে। হংকং থেকে আসা ক্যাথে প্যাসিফিকের একটি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে আকাশে চক্কর দিচ্ছে।
এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৈয়দপুর থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট এবং ইউএস-বাংলার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর পুনরায় চট্টগ্রামে ফিরে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে এক অডিও বার্তায় বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ বলেন,
“আসসালামু আলাইকুম। শাহজালাল বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া অগ্নি দুর্ঘটনা নিবারণের জন্য আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিসের লোক কাজ করছে। বিমানবাহিনী থেকে ফায়ার ইউনিট এসে তারা কাজ করছে। প্যারালালি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লোকজন এসেও কাজ করছে। আমি সাংবাদিক ভাইদেরকে বলব, আমরা এখন একটা ইমার্জেন্সি হ্যান্ডেল করছি। এই সময় আপনারা ফোন দিয়ে আমাদেরকে একটু মানে অন্যদিকে ডাইভার্ট করবেন না প্লিজ। আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। একটা সমস্যা হয়েছে। আমরা সকলে মিলে এই সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছি। আপনারা তথ্য পাবেন। সময় অনুযায়ী তথ্য পাবেন। আমাদেরকে এখন এই ইমার্জেন্সিটাকে নিরাপদে হ্যান্ডেল করার জন্য সুযোগ দিন প্লিজ। আসসালামু আলাইকুম।”
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, আগুন মূলত কার্গো ভিলেজে সীমাবদ্ধ রয়েছে, যাত্রী টার্মিনাল এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছে। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সাময়িকভাবে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেই স্বাভাবিক কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
ফায়ার সার্ভিস, সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার একযোগে প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।