এখনও ঘুমে সমস্যা মাইলস্টোনের ৭১ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর


এখনও ঘুমে সমস্যা মাইলস্টোনের ৭১ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির ৭১ শতাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে মানসিক রোগে আক্রান্ত শিশুদের অনেকেই বাড়িতে অবস্থান করছেন।

শনিবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানসিকভাবে অস্থির অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। শিশুদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং তাদের দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আরিফুজ্জামান বলেন, “বিমান দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোনের ২৫৫ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নিয়ে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১ শতাংশের ঘুমে সমস্যা রয়েছে। ২৯ শতাংশ খিটখিটে, ২৬ শতাংশ ফ্ল্যাশব্যাক, ২৬ শতাংশ ক্ষুধামান্দ্য, ২০ শতাংশ মনোযোগের ঘাটতি এবং ২০ শতাংশ কাজের প্রতি অনাগ্রহের সমস্যায় ভুগছে।”

ডা. আরিফুজ্জামান আরও বলেন, “মানসিক রোগে আক্রান্ত শিশুরা বাড়িতে অবস্থান করছে এবং রাতের ঘুমের সমস্যা সহ অন্যান্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। জরুরি চিকিৎসা সত্ত্বেও এই শিশুদের অনেকেই চিকিৎসার আওতায় আসতে পারছে না। গবেষণার সময় আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত কাজ করছে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে সচেতনতামূলক নাটিকা প্রদর্শন করা হয়। এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

ডা. নাজমুল হুদা বাপ্পি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১২৭ জনের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, ৮২.৫ শতাংশ মধ্যম থেকে গুরুতর বিষণ্নতায় ভুগছেন। ৬৪.১ শতাংশ ট্রমা বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার-এ আক্রান্ত। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর ৬৯.৬ শতাংশ নিম্ন বা মধ্যবিত্ত; এদের মধ্যে ৮৯.৪ শতাংশকে বন্দুকের গুলিতে আহত হয়েছে। ৮১.১ শতাংশ সময়মতো চিকিৎসা পেয়েছেন, ১০.১ শতাংশ চিকিৎসা বিলম্বে হয়েছে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, “বিমান বিধস্তে আমরা তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৮ শিক্ষার্থী হারিয়েছি। তিন শিক্ষক, তিন অভিভাবক, এক আয়া এবং পথচারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ঘুমাতে পারছে না। এমনকি ঘটনার দিনে স্কুলে উপস্থিত না থাকা শিক্ষার্থীরাও মানসিক সমস্যায় ভুগছে। চোখ বন্ধ করলে তারা নিজের ওপর বিমান পড়া দেখছেন, খেতে পারছে না।”

তিনি আরও বলেন, “সাইমন নামে এক শিক্ষার্থী ঘটনার দিন উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিল। এখন সে বিমান শব্দ শুনলে আতঙ্কিত হয়ে যায়, স্কুলের নাম শুনলে আঁতকে ওঠে।”

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “সমাজে যাদের মানসিক সচেতনতা নেই, তাদের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বাইরে রয়েছেন। চিকিৎসক পরিবারের সদস্যও এই তালিকায় রয়েছেন। তাদের চিহ্নিত করে মানসিক চিকিৎসা দিতে হবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×