গভীর অবিশ্বাসে ভেস্তে গেল আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:৩৪ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
দীর্ঘ চার দিনের আলোচনার পর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত সমাধান আনতে পারেনি। পাকিস্তান আফগানিস্তানকে, এবং আফগানিস্তান পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলকে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সমাধানের কোনও সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছেন না। খবর আল জাজিরা ও এএফপি।
যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশকে পূর্ণাঙ্গ সংঘাত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘শেষ চেষ্টা’ অব্যাহত রয়েছে। তবে দোহায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দু’দেশের মধ্যে নতুন সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর ইসলামাবাদের মূল দাবি; কাবুলের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আফগান প্রতিনিধি দলের অবস্থান পরিবর্তনের অনুরোধ পুরণ হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আফগান দলের জন্য কাবুল থেকে পাওয়া নির্দেশনা আলোচনাকে জটিল করে তুলছে।”
অন্যদিকে, আফগানিস্তান পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের ‘সমন্বয়ের অভাব’কে আলোচনার ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি দল ‘স্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করছে না’ এবং ‘আলোচনার টেবিল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’
আলোচনায় আফগান দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিষয়ক উপমন্ত্রী হাজি নাজিব। পাকিস্তান তাদের প্রতিনিধিদের নাম প্রকাশ করেননি।
আলোচনায় যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর পাকিস্তানি জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে আফগানিস্তানের দিক থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তারা মূল বিষয় থেকে সরে গেছে। দোষারোপ ও ছলচাতুরী করেছে। এভাবে আলোচনায় কোনো কার্যকর সমাধান পৌছানো যায়নি।”
তিনি আরও বলেছেন, “পাকিস্তান শান্তির মনোভাব নিয়েই আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল। কাবুল ‘পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসীদের প্রতি অবারিত সমর্থন’ দিচ্ছে। আমরা সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখব।”
৯ অক্টোবর কাবুলে বিস্ফোরণের ঘটনায় তালেবান পাকিস্তানকে দায়ী করে। এর পর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক সীমান্ত সংঘাত শুরু হয়। তালেবানের দাবি, কাবুলে পাকিস্তান বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তান বলছে, তালেবান বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে, ফলে সেনারাও পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়।
প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর, ১৯ অক্টোবর দোহায় আলোচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। পরে ইস্তানবুলে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এক সময় যৌথ নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে পাকিস্তান ও আফগান তালেবান মিত্র ছিল। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, দেশটি টিটিপিকে আশ্রয় দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে। দোহায় শান্তি আলোচনার পরে উভয় দেশ যুদ্ধ বন্ধ করে ‘স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ গড়ার চেষ্টা করেছিল।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, দোহায় আলোচনার পর “উভয় পক্ষ তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি এবং স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে। দুই পক্ষ অস্ত্রবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে এবং এর বাস্তবায়ন যাচাই করতে পরবর্তী বৈঠকেও সম্মত হয়েছে। এর ফলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনে অবদান রাখা সম্ভব হবে।”
পাকিস্তানভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুই দেশের সংঘাতে অন্তত ২,৪১৪ জন নিহত হয়েছে। গত বছর সীমান্ত সংঘাতে উভয় পক্ষের ২,৫৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর সীমান্তে হামলার ঘটনা বেড়েছে। পাশাপাশি আফগান শরণার্থীদের বিতাড়িত করার পর টিটিপি আরও সক্রিয় হয়েছে। কয়েক দশকের সংঘাত থেকে পালিয়ে অন্তত ৩০ লাখ আফগান বর্তমানে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে।