গাজায় আবারও ইসরায়েলি হামলা ও গুলিবর্ষণ, প্রশ্নের মুখে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:০৩ এম, ২১ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলি সেনাদের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও গুলিবর্ষণে গাজার কয়েকজন নাগরিক নিহত হওয়ার পর, হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদন জানায়, গাজার পূর্বাঞ্চলের আল-শাআফ এলাকায় দুটি পৃথক হামলার ঘটনায় চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, নিহতরা নিজেদের ঘরবাড়ির অবস্থা দেখতে এলাকা সফরে গেলে ইসরায়েলি সেনারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য দাবি করেছে, তারা কিছু সশস্ত্র যোদ্ধার ওপর গুলি ছুঁড়েছে, যারা "হলুদ সীমারেখা" পার করে শুজাইয়ার দিকে এগিয়ে আসছিল এবং তাদের জন্য হুমকি তৈরি করছিল।
গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি কার্যকর হয়, তার পরেও গাজায় বারবার সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। গাজার প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত রোববারের ইসরায়েলি বিমান হামলাতেই প্রাণ গেছে অন্তত ৪২ জনের, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
ইসরায়েল জানায়, এই হামলা ছিল রাফাহ এলাকায় হামাস যোদ্ধাদের গুলিতে দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ। তবে হামাস তাদের দায় অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, রাফাহর যে অংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানে তাদের কোনো ইউনিট সক্রিয় নেই। সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, "ইসরায়েল যুদ্ধ আবার শুরু করার অজুহাত খুঁজছে।"
হামাস জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং বাকিদের মৃতদেহ হস্তান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে গাজার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এই প্রক্রিয়ায় বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
রোববার ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দিলেও পরে জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে। তবুও, মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানিয়েছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো আবার শুরু হয়েছে, যদিও কী পরিমাণ সহায়তা সেখানে পৌঁছেছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি তারেক আবু আজযুম সোমবার জানান, ইসরায়েল এখনও সাহায্যবাহী ট্রাকগুলোকে চেকপয়েন্টে আটকে রেখেছে। তিনি আরও জানান, সোমবার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলেও ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়, যা গাজাবাসীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই অস্থির পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে বলেন, “গাজায় এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।” তিনি একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্তের আহ্বান জানান।
সূত্র: আল জাজিরা