ইরানে পরমাণু বোমা তৈরির দাবি কট্টরপন্থি এমপিদের


ইরানে পরমাণু বোমা তৈরির দাবি কট্টরপন্থি এমপিদের

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে ইরানের কট্টরপন্থি আইনপ্রণেতারা আবারও দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার মধ্যেই এই দাবি সামনে এল।

মাশহাদ শহরের এক কট্টরপন্থি সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে পার্লামেন্টের ৭০ জন এমপি একটি যৌথ চিঠিতে সই করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা নীতি নতুনভাবে সাজানো প্রয়োজন। যদিও এই চিঠি সরাসরি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে পাঠানো হয়নি কারণ তার সিদ্ধান্ত প্রশ্নাতীত। এটি পাঠানো হয়েছে সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে, যারা পারমাণবিক কর্মসূচি তদারকি করে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে কখনোই বোমা তৈরির জন্য নয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ইসরায়েলের হুমকির মুখে অনেক এমপি এখন ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছেন।

তাদের যুক্তি, খামেনি প্রায় দুই দশক আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তবে সেই ফতোয়ায় স্পষ্টভাবে অস্ত্র উৎপাদন বা মজুত রাখাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এমপিদের অভিযোগ, ইসরায়েল এখন উন্মত্ততার চূড়ায় পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে।

গত জুনে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর কট্টর ইরানি মহলে এই দাবি আরও জোরালো হয়। তখন টানা ১২ দিনের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে।

গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ঘোষণা দেয়, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপের জবাবে তারা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করছে। ইউরোপের এই তিন দেশ ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তির অংশ হলেও এখন জাতিসংঘে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর ফলে ২০১৫ সালে প্রত্যাহার করা জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা ফের চালু হতে পারে, যদি শেষ মুহূর্তে নতুন কোনো সমঝোতা না হয়।

এ পরিস্থিতিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন ইউরোপীয় এবং অন্যান্য শক্তিধর দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানও মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেবেন, যেখানে গাজার যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে।

আরাঘচি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি ইউরোপের কাছে একটি বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছেন। জানা গেছে, প্রস্তাবে বলা হয়েছে ইরান তাদের মজুত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াজাত ও হ্রাস করবে, বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে হবে।

তবে তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো নানা অজুহাত দিচ্ছে। এমনকি বলছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাকি পুরো রাজনৈতিক কাঠামোকে প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু আরাঘচি জোর দিয়ে বলেন, তার পেছনে সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলও রয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×