৫০টি গাধা ও ১০০০ কেজি মাংস জব্দ পাকিস্তানের গোপন কসাইখানা থেকে
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:১৯ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত তারনোল এলাকায় গোপনে পরিচালিত একটি অবৈধ কসাইখানায় অভিযান চালিয়ে বড় পরিমাণে গাধা ও গাধার মাংস জব্দ করেছে ইসলামাবাদ ফুড অথরিটি (আইএফএ)। এ অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৫০টি জীবিত গাধা এবং ১,০০০ কেজি গাধার মাংস।
রবিবার (২৭ জুলাই) পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধার করা মাংস বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
আইএফএ-এর একজন মুখপাত্র জানান, গোপন কসাইখানায় বিপুল পরিমাণ প্যাকেটজাত মাংস এবং জীবন্ত গাধা পাওয়া গেছে। আইএফএ’র উপপরিচালক ডা. তাহিরা সিদ্দিক জানান, “মোট এক টন (১,০০০ কেজি) গাধার মাংস জব্দ করা হয়েছে।” কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মাংস ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে একজন বিদেশিকে আটক করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত এবং মাংস কোথায় সরবরাহ করা হয়েছে—তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন সংস্থার পরিচালক।
দেশটিতে গাধার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়েও আলোকপাত করেছে প্রতিবেদনটি। পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর জুন মাসে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশে গাধার সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৯ হাজার। বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখ ৪৭ হাজার, যা আগের বছর ছিল ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাধার চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ চীনা বাজার। চীনে গাধার মাংস বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহারের পাশাপাশি গাধার চামড়া দিয়ে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ‘ই-জিয়াও’। এক সময় রপ্তানি সংক্রান্ত জটিলতায় গাধার চামড়া ও মাংস রপ্তানিতে বাধা থাকলেও বর্তমানে তা অনেকটা কেটে গেছে বলে জানা গেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, চীনের ই-জিয়াও শিল্পে চাহিদা পূরণে বিভিন্ন দেশে গাধা জবাই বেড়েছে বলে মনে করেন প্রাণী অধিকার সংগঠন ও পশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রাণী কল্যাণ সংস্থা ‘দ্য ডাংকি স্যাংচুয়ারি’ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছে, “ই-জিয়াও উৎপাদনে বছরে প্রায় ৫৯ লাখ গাধার চামড়া প্রয়োজন, যা বিশ্বের গাধা জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।”
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘চায়না ডেইলি’ জানায়, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শানডং প্রদেশে প্রায় ৩ হাজার বছর ধরে ই-জিয়াও উৎপাদনের ঐতিহ্য রয়েছে। দেশটির মোট ই-জিয়াও উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশই হয়ে থাকে এই প্রদেশে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এটিকে “জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এটি চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাশিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।