ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, ছেলেদের অংশগ্রহণ নিয়ে জল্পনা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:১৯ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তানে আবারও উত্তেজনার সূচনা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে আসছে মাসে দেশজুড়ে শুরু হতে যাচ্ছে ব্যাপক বিক্ষোভ। এই আন্দোলনে তার যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দুই ছেলের যোগদানের সম্ভাবনা ঘিরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্ত করার দাবিতে আগামী ৫ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী আন্দোলনে নামছে তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। দলের নেতারা এটিকে ‘চূড়ান্ত প্রচেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছেন। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনটি ৯০ দিনব্যাপী চলবে।
এদিকে গুঞ্জন উঠেছে, ইমরানের দুই ছেলে — সুলেমান খান (২৮) এবং কাসিম খান (২৬) — যুক্তরাজ্য থেকে পাকিস্তানে এসে এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন। তাদের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ ঘিরে সরকারি মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ অভিযোগ করেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সন্তানদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লেখেন,
"সরকার হুমকি দিয়েছে, যদি আমার ছেলেরা তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে চায়, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এটা ব্যক্তিগত প্রতিশোধ ছাড়া কিছু নয়।"
ইমরান খান বর্তমানে কারাবন্দি, তাকে ২০২৩ সালের আগস্টে আটক করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদসহ একাধিক মামলা রয়েছে। যদিও তার সমর্থকদের দাবি, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পিটিআই-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা সায়েদ জুলফিকার বোখারী জানিয়েছেন,
"ইমরান খানের ছেলেরা শুধু বাবার মুক্তি চান, রাজনীতিতে জড়ানোর ইচ্ছে তাদের নেই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা সংশ্লিষ্ট মহলে দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে।"
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সুলেমান ও কাসিম চাইলে বৈধভাবে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে পারেন। তবে আইন ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,
"তারা সরকারের ফোকাসের বিষয় নয়।"
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ ছেলেদের এই বিক্ষোভে অংশ না নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসমা শিরাজীর মতে, ইমরানের ছেলেরা বাস্তবিকভাবে পাকিস্তানে যাবেন না। তিনি মন্তব্য করেন,
"তারা এলেও বাবার মুক্তি আদায় করতে পারবে না। বরং জনসমর্থন বাড়ানোর শো-পিস হিসেবেই ব্যবহৃত হবেন।"
আইন বিশেষজ্ঞ ওসামা মালিক মনে করেন, সরকারের উচিত তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাধা না দেওয়া। তবে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকার বিক্ষোভ সামাল দিতে নতুন এক আধাসামরিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করছে। বিদ্যমান একটি ইউনিটকে ‘ফেডারেল কনস্টেবুলারি’ নামে রূপান্তরিত করা হবে, যার মূল দায়িত্ব থাকবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, দাঙ্গা দমন এবং সন্ত্রাস দমন।
তবে বিরোধী দল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই বাহিনী রাজনৈতিক দমন-পীড়নে ব্যবহৃত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনের সহ-চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ বলেন,
"আজকের পাকিস্তানে মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন থেকেও জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।"
তিনি ওয়াশিংটনকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে আরও দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কারাগারে থাকলেও ইমরান খানের জনপ্রিয়তা এখনও প্রবল। সাবেক এই ক্রিকেট তারকা রাজনীতিতে ফেরার প্রত্যাশা এখনো ছাড়েননি, এবং তার দল তাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের মাধ্যমে জনসমর্থন ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।