সালমান শাহের মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা, স্ত্রী সামিরাসহ আসামি ১১


সালমান শাহের মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা, স্ত্রী সামিরাসহ আসামি ১১

ঢাকাই চলচ্চিত্রের রূপালি পর্দার তারকা সালমান শাহকে ঘিরে দীর্ঘদিনের রহস্য এবার নতুন মোড় নিচ্ছে। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আদালতের নির্দেশে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ঢাকার রমনা থানায় এই মামলা করেন প্রয়াত অভিনেতার মামা আলমগীর কুমকুম। মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হকের। তাঁর সঙ্গে আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা ডনসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামাও।

এই মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে আদালতের রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। আদালত অভিনেতার মা নীলা চৌধুরীর রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যার অভিযোগে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেন। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দিয়ে বলেন, সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে আগের তদন্তে অসংগতি ছিল, যা নতুন করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

আদালতের শুনানিতে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুর সময় সালমান শাহর দেহে দেখা যায় অস্বাভাবিক কিছু চিহ্ন, বুকের বাম পাশে ছিল কালো দাগ এবং নিঃসৃত হয়েছিল মল ও বীর্য। এছাড়া, অভিনেতার ঘরে পাওয়া যায় একটি সিরিঞ্জ এবং সামিরার ব্যাগে ক্লোরোফর্মজাতীয় ওষুধ। এসব তথ্য আদালতের কাছে উপস্থাপন করে বাদীপক্ষ দাবি করে, পোস্টমর্টেমে আত্মহত্যা বলা হলেও প্রকৃত তদন্তে বড় ধরনের গড়মিল রয়েছে। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই আদালত এটিকে ‘হত্যা মামলা’ হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

সালমান শাহর মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে, যা তৎকালীন সময়ে পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়। স্ত্রী সামিরা হক দাবি করেছিলেন, সালমান আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তাঁর পরিবার এই দাবিকে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। সালমান শাহের মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা বরাবরই দাবি করে আসছেন, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া সালমান শাহ, যার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, ছিলেন কমর উদ্দিন চৌধুরী ও নীলা চৌধুরীর পুত্র। ছোটপর্দায় অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বড় পর্দায় এসে হয়ে ওঠেন এক অসাধারণ কিংবদন্তি। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে, যা পরিচালনা করেন সোহানুর রহমান সোহান। এই ছবিতেই দর্শক এক নতুন নায়ককে আবিষ্কার করে মুগ্ধ হয়ে যায়, বাংলা সিনেমার বাজারে ফেরে প্রাণ।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২৭টি হিট সিনেমা উপহার দেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের তালিকায় রয়েছে ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিচার হবে’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘এই ঘর এই সংসার’সহ বহু জনপ্রিয় সিনেমা।

স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকাই সিনেমায় কিংবদন্তির মর্যাদা অর্জন করা এই অভিনেতার মৃত্যু রহস্যের পর্দা শেষ পর্যন্ত কি উন্মোচিত হবে, এখন সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ভক্ত-অনুরাগীদের মনে। আদালতের নতুন নির্দেশনায় যে তদন্ত শুরু হতে যাচ্ছে, তাতে হয়তো মিলতে পারে বহু প্রতীক্ষিত উত্তর।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×