গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও প্রয়োজন: আসিফ নজরুল
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:০৯ এম, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
গুমের মতো নিকৃষ্ট অপরাধ বন্ধ করতে কেবল আইন প্রণয়ন নয়, প্রয়োজন গভীর প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন; এমন মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।”
শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘এনশিওরিং জাস্টিস: দি রোল অফ দি জুডিশিয়ারি ইন অ্যাড্রেসিং এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কর্মশালাটি গুমসংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির আয়োজন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের ঢাকাস্থ কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের পর বাংলাদেশ আজ একটি পরিবর্তিত বাস্তবতায় পৌঁছেছে। এই পরিবর্তন টেকসই করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।”
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “রায় লেখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের রায়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুমসংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রণয়ন করছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান।
ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন। এই পর্বে গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী কমিশন গঠন, নতুন আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের অধীনে স্বাধীন তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, মামলার মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভিকটিমদের মানসিক ও আইনি সহায়তা প্রদান, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণসহ নানা সুপারিশ উঠে আসে। এছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অস্ত্র-বিস্ফোরক আইন সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, অগ্রাধিকারভিত্তিতে চিহ্নিত মামলার নিষ্পত্তি, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভিকটিমদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাবও আলোচনায় স্থান পায়।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত প্রায় ৯০ জন বিচারক এই প্রশিক্ষণমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।