কমলাপুরে মেট্রোরেলে দ্বিগুণ মূল্যে চুক্তি পেল ভারতীয় কোম্পানি
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:২০ এম, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক ব্যবস্থার কাজ পেয়েছে ভারতের লারসন অ্যান্ড টুব্রু (Larsen & Toubro)। তবে এই কাজটি দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি ব্যয়ে।
২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুযায়ী, এই অংশে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ৪৬৫ কোটি টাকার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান দাবি করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে তারা ব্যয় কমাতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের ভাষায়, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরও বেশি অর্থ দাবি করেছিল, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর ব্যয় কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রের শুরুতে লারসন অ্যান্ড টুব্রু প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা দাবি করেছিল, যা প্রাক্কলনের দ্বিগুণেরও বেশি। এত বেশি ব্যয়ে চুক্তি করতে অন্তর্বর্তী সরকার অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং জাইকা (JICA)-এর সঙ্গে চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার কারণে অবশেষে তাদের দিয়েই কাজটি করাতে হচ্ছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, কোম্পানির প্রাথমিক প্রস্তাবের পর সরকার ৪০০ কোটি টাকায় কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার পরিবর্তন, কাঁচামাল সরবরাহে জটিলতা এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রতিষ্ঠানটি তাতে রাজি হয়নি। দীর্ঘ দর-কষাকষির পর দুই পক্ষ ৪৬৫ কোটি টাকায় সমঝোতায় পৌঁছায়।
সদ্য বিদায়ী প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, “২০২২ সালের ডলারের দর অনুযায়ী ২৭৪ কোটি টাকায় করার কথা ছিল। কিন্তু ডলারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ৪৬৫ কোটি টাকায় করতে হচ্ছে।”
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ এ ব্যয় হ্রাসকেই সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার থেকে ৩০-৪০ শতাংশ কম মূল্যে কাজ করাতে রাজি করতে পেরেছি।”
এই চুক্তির আওতায় মেট্রোরেল লাইনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, স্টেশনের লিফট ও এসকেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গেট স্থাপন, মনিটর, সিসি ক্যামেরা, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের মতিঝিল-কমলাপুর অংশের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, যা আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
সরকারের ধারণা, কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণে যাত্রীসুবিধা বাড়বে এবং কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রচুর যাত্রী পাওয়া যাবে। ডিএমটিসিএল আশা করছে, নতুন স্টেশন চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১২৬ কোটি টাকার রাজস্ব আসবে।
বর্তমানে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের বেশিরভাগ পিলারের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে ভায়াডাক্ট স্থাপন এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি; ধীরে ধীরে বসানোর কাজ চলছে। প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।